যশোর প্রতিনিধি
যশোর-৫ আসনের এমপি, স্থাণীয় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্গাপূজায় বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন মণিরামপুর হাজিরহাট মন্দির ও সর্বজনীন দুর্গা পূজা পরিচালনা কমিটির সভাপতি দাবিদার শ্রীমতি রীতা রানী পাড়ে। সোমবার প্রেসক্লাব যশোরে এক লিখিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রতিমন্ত্রী একজন উচ্চবর্ণের হিন্দু ব্রাক্ষণ হওয়ায় অত্র এলাকার ৯৫ ভাগ নি¤œবর্ণের হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষের প্রতি হিংসা চরিতার্থ ও ঘৃণ্য মানসিকতা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে এই জঘণ্য কর্মকান্ড পরিচালনা করিতেছেন’।
তবে সংবাদ সম্মেলনে আনিত এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন স্থাণীয় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য্য। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন মণিরামপুর হাজিরহাট মন্দির ও সর্বজনীন দুর্গা পূজা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিয় কান্তি রায়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রীতা রাণী পাড়ে আরও বলেন, আমরা মণিরামপুর উপজেলার ৫ নং হরিদাসকাটি ইউনিয়নের অধিবাসী। ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত হাজিরহাট বাজারে প্রতি বছর জাকজমকপূর্ণভাবে দূর্গাপুজা উদযাপিত হয়। গত ২৬ জুলাই এলাকার ছয়টি গ্রামের সহা¯্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে দূর্গা পূজা উদযাপন পরিচালনা কমিটি গঠন করতে এক সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। ওই সভায় পূর্ববর্তী সভাপতি কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা এবং নতুন সভাপতির সভাপতিত্বে উপস্থিত ৮০ ভাগ মানুষের সমর্থনে রীতা রানী পাড়ে কে সভাপতি ও অমিও রায়কে সাধরণসম্পাদক এবং অশান্ত মল্লিককে কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত করা হয়। তবে তাৎক্ষণিক বহিরাগত গ্রাম হতে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক, পূর্ববর্তী কমিটির হাতে গোনা কয়েকজন হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত থাকাবস্থায় আমাদের উপর হামলা করে কমিটি গঠনে বাধাগ্রস্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ইতিপূর্বের কয়েক বছরের পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ অত্র কমিটি গঠনের মিটিংএ উপস্থিত থাকাবস্থায় বর্তমান কমিটিকে সমর্থন করে আসলেও প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্যের সমর্থক ও ক্যাডার হিসেবে পরিচিতরা তার সহায়তায় জেলা, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় আমরা যাতে পূজা পরিচালনা করিতে না পারি তার জন্য বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন। এসব ষড়যন্ত্রের ধারবাহিকতায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকালে প্রতিমন্ত্রীর মদদে শতাধিক পুলিশ এবং প্রতিমন্ত্রীর ক্যাডার খ্যাত স্থাণীয় চেয়ারম্যান আলমগীর কবির লিটনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক মুসলমান স¤প্রদায়ের লোকজন অবস্থান নেন। পরবর্তিতে রাত ৮ টায় পূজা উদযাপন কমিটি যশোর জেলা শাখার সভাপতি নেতৃত্বে মণিরামপুরের সহকারী ভূমি কমিশনার, ওসি তদন্ত উপস্থিত হন। তাহারা হিন্দু সম্প্রদায়ের মতামত উপেক্ষা করে শুধুমাত্র প্রতিমন্ত্রীর ইচ্ছা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভূমিকা রাখেন। এরই মাঝে ওইদিন রাত ১০ টায় যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার( যশোর সার্কেল) আরো কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগে বলা হয়, প্রশাসনের এসব কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই আচমকা পুলিশ লাঠিপেটা করে পূজা কমিটির লোকজনদের বের করে দেন এবং ৫নং হরিদাসকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বিপদ ভঞ্জন পাড়েকে জিম্মি করে তার স্ত্রী রীতা রানী পাড়ের কাছ থেকে পূজা মন্দির ও পূজা পরিচালনায় ব্যবহৃত অফিস কক্ষের চাবি ছিনিয়ে নেয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে পূজা উদযাপন বাধাগ্রস্থ করার সুষ্ঠুু তদন্তসহ বিচার দাবি ও শানিতপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আনিত এসব অভিযোগের ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “এই কমিটি গতবারের। এই কমিটির সঙ্গে আমার নুন্যতম কোন সম্পর্ক নেই। আমি তো রাজনীতি করি, এই সমস্ত অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ আসেই। মণিরামপুরে কে কি করে তা সবাই ভালোভাবে জানে। নিজেরা নিজেরা গোলমাল করে এখন রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। দূর্গাপূজা- কে বা কারা কিভাবে করবে তা পূজা উদযাপন পরিষদ ও কমিটির ব্যাপার”। #