ট্রাম্পের শুল্ক চাপ, কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে কোন পথে ভারত?

Share

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে ভারত–মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় প্রকাশ্যে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। তার অভিযোগ, ভারতের সঙ্গে ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত অর্থ রাশিয়া ব্যবহার করছে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে। এর ফলেই ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।

নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান এবং রয়টার্সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ ঘটনাকে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে একটি নতুন চাপের পরীক্ষা বলে উল্লেখ করেছে। যদিও বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, নয়াদিল্লি কোনো অবস্থাতেই দেশের স্বার্থে আপস করবে না।

এই প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক ফোনালাপগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগ কেড়েছে। সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে তার কথা হয়। তার আগে, গত সপ্তাহেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও ফোনালাপ করেন মোদি।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই দুই শীর্ষ নেতার সঙ্গে পরপর আলাদা আলাদা আলোচনার কূটনৈতিক বার্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদি এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখাতে চাইছেন যে ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখেই উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি যদিও ভারতের জন্য অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করছে, তবু নয়াদিল্লি আপাতত সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে ‘ব্যালান্সড কূটনীতি’ অবলম্বন করছে।

ভারতের বক্তব্য স্পষ্ট—‘আমাদের বাণিজ্যনীতি দেশের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত, তা কোনো বাইরের চাপে বদলাবে না।

একইসঙ্গে, রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখা এবং পশ্চিমা দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব চালিয়ে যাওয়া—দুটি পথই খোলা রাখছে ভারত।

তবে, মার্কিন শুল্কনীতি যে ভারতের জন্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা কমে গেলে, রপ্তানি খাত প্রভাবিত হতে পারে। ফলে, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ভারতকে নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি, বিকল্প বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করতে হতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এখনো শক্তিশালী, কারণ দেশটি রাশিয়া ও আমেরিকা—দুটোই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে ধরে রাখতে চাইছে। কিন্তু এই দ্বৈত ভারসাম্য রক্ষা কতটা সম্ভব হবে, তা নির্ভর করবে মার্কিন প্রশাসনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির ওপর।

Read more