যশোর প্রতিনিধি _
যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিহাটি গ্রামে দুর্বৃত্তদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মতুয়া সম্প্রদায়ের ১৪ পরিবারকে পুনর্বাসন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৯টি ঘর নির্মাণসহ পুড়ে যাওয়া সকল আসবাবপত্র ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে তাদের। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার ও যশোর সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মেরামত করা ঘর ও নগদ টাকা তুলে দেন।
স্থানীয় ডহর মশিহাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকীসহ উর্ধতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ।
ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাপ্রধানের নির্দেশে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাড়িয়েছি। সিভিল প্রশাসনও অনেক কাজ করেছে। তাদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর পূণনির্মাণ করে দিয়েছি। যার যা ক্ষতি হয়েছিল, তা পূরণ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কিছু প্রয়োজন হয় তাও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে করা হবে।’
এলাকাবাসীর মধ্যে যে আতংক কাজ করছে তা নিরসনে সেনা টহল অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের মালিকরা সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ডহর মশিয়াহাটী বাড়েদা পাড়ার বিষ্ণ বিশ্বাসের স্ত্রী শিউলি বিশ্বাস বলেন, প্রায় দুই মাস কত আতংক আর দুর্ভোগ কষ্টে কেটেছে। অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। এখন অনেক ভালো আছি। সেনাবাহিনী পাশে দাঁড়িয়েছে। নতুন ঘর পেয়েছি, ঘরের তৈজস পত্র, আসবাব পত্র পেয়েছি। নগদ টাকাও দিয়েছে। সবার সহযোগিতায় আতংক দূর হয়ে গেছে।
স্মৃতি বিশ্বাস নামে অপর এক ক্ষতিগ্রস্ত বলেন, ‘সব হারিয়ে ছিলাম। আড়াই মাস কত কষ্ট করেছি। বৃষ্টিতে ভিজেছি। এখন সেনাবাহিনীর কল্যাণে নতুন ঘর পেলাম। আগের চেয়ে ভালো ঘর পেয়েছি। নতুন ঘর খাট, বিছানা, ফ্যান, ফ্রিজ, টিভি ঘরের ভিতরে যার যা পুড়েছিলো; তারা সবটাই দিয়েছে। সেনাবাহিনী আমার পুনর্জীবন দিয়েছে। এখন আতংক কাটলেও মাঝে মধ্যে সেনাবাহিনীর টহলের প্রয়োজন আছে।সেনা কর্মকর্তারা তারও আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২২ মে ডহর মশিহাটি গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে অভয়নগর উপজেলা কৃষক দল সভাপতি তরিকুল ইসলামকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন রাতে বিক্ষুদ্ধরা ওই গ্রামের মতুয়া সম্প্রদায়ের ১৪টি পরিবারের ১৯টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় ও লুটপাট করে।
আতঙ্কে এসব বাড়ির লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিভিন্নরকম সহযোগিতা দেয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি পূননির্মাণ করে দেবে বলেও সেসময় ঘোষণা দেওয়া হয়। যা আজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।