ঢাকা টাওয়ার ডেস্ক _
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনার মুহূর্তে খুচরা বাজারে চাল থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে, বৃষ্টির অজুহাতে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিম ও সবজির দামও বাড়ানো হয়েছে। বাদ যায়নি মসলারও।
এই কারণে শুক্রবার ছুটির দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এসে অস্বস্তিতে ভোগেন ক্রেতারা। এদিন রাজধানীর কাওরানবাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গত এক মাস ধরেই খুচরা বাজারে বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৮৭ টাকা; যা এক মাস আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছৈ।
মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা; যা আগে ৭৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি কেজি নাজিরশাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা; যা এক মাস আগে ৮৫ টাকা ছিল।
বিআর ২৮ ও পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা; যা আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা যা এক আগে ৫৫ টাকা ছিল।
কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বোরোর ভরা মৌসুম চলছে। মাঠের ধান চাল হয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এমন সময় সব ধরনের চালের দাম কমার কথা। কিন্তু কমেনি; উলটো বস্তায় সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বেড়েছে।
মিলারদের কারসাজিতেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, এবার মিলাররা কৃষকের ধান মাঠ থেকেই কিনে নিয়েছে। পরে সংকট দেখিয়ে নিজেরাই ধানের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বাড়াচ্ছে দাম। এরই মধ্যে ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ঈদের পর থেকেই মিলাররা চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। ফলে পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। এতে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়ায় ক্রেতারা মৌসুমেও বাড়তি দামে চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মশুর ডাল (ছোট দান) সর্ব নিম্ন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা; যা এক সপ্তাহ আগেও ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি দানার প্রতি কেজি মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা; যা আগে ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯১৫ টাকা; যা আগে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি; যা এক সপ্তাহ আগে ১৪০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা; যা আগে ৫৫০ টাকা ছিল। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি তেজপাতা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. সালাউদ্দিন বলেন, ফের সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সরবরাহ থাকলেও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। তদারকি সংস্থার কর্মকর্তাদের বাজারে দেখা যাচ্ছে না।
সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা; যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। তবে কমেছে লেয়ার ও সোনালি মুরগির দাম। কেজি প্রতি সোনালি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা; যা এক সপ্তাহ আগে ২২৫-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। লেয়ার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা; যা আগে ২৩০-২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে বেড়েছে ডিমের দাম। শুক্রবার প্রতিহালি (৪ পিস) বিক্রি হয় ৪৬ টাকা; যা গত সপ্তাহে ৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
খুচরা বাজারে চিচিঙ্গা কেজিকে ১০-২০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর ধন্দুল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা এবং পেঁপে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা।
এ ছাড়া প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১৪০-১৬০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা আর আলু কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট ‘ এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট বাড়ে। চাহিদা মেটাতে সংকটে পড়ে। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও নীরবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু বিক্রেতা। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে, অসাধুদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা।