যশোর প্রতিনিধি :চেক জালিয়াতির মাধ্যমে যশোর শিক্ষা বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট দিতে আরো তিনদিনের সময় প্রার্থণা করেছে তদন্ত কমিটি। প্রধান অভিযুক্ত হিসাব সহকারী আব্দুস সালামের বক্তব্য নিতে না পারায় এ সময় প্রার্থনা করা হয়েছে। এদিকে দুদক বলছে শিগগিরই তারাও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করবে এবং টাকার সর্বশেষ গন্তব্য পর্যন্ত তদন্ত করা হবে। সেক্ষেত্রে আসামির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে যশোর শিক্ষা বোর্ড সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করে। এ ৯টি চেক জালিয়াতি করে ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের নামে ১ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১০টাকা এবং শাহী লাল স্টোরের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। গত ৭ অক্টোবার বোর্ডের অভ্যন্তরীন তদন্তে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। বোর্ডের চেয়ারম্যান ওইদিনই কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানীকে প্রধান করে ৫ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ১৮ অক্টোবর তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেবার কথা ছিল। কিন্তু তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষ করতে আরো তিনদিনের সময় প্রার্থণা করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান কেএম রব্বানী জানিয়েছেন, প্রধান অভিযুক্ত হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম একা দায় স্বীকার একটি পত্র দিয়েছেন। কিন্তু তিনি পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। যে কারণে তদন্ত শেষ করতে আরো তিনদিনের সময় প্রার্থণা করা হয়েছে। এ সময়ের পরই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় দুদক বোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিবসহ ৫জনের নামে মামলা করলেও আমাদের তদন্তে তার কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ আমরা ও দুদক পৃথকভাবে তদন্ত করছি। কেউ কারো সাথে তথ্য আদান প্রদান করছে না। ফলে আমরা তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট জমা দেবো।
এদিকে দুদক বলছে শিগগিরই তারাও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করবে এবং টাকার সর্বশেষ গন্তব্য পর্যন্ত তদন্ত করা হবে। সেক্ষেত্রে আসামির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।
তিনি বলেন, আমি কি কি তথ্য প্রমাণ পাবো সেটাই তদন্ত। ফলে তদন্তে এ ঘটনায় বোর্ডে কার কি দায়িত্ব ছিলো। অডিট বিভাগ বিভাগের কি দায়িত্ব ছিল সেটাও দেখা হবে। যে টাকা উদ্ধার হয়েছে তা কিভাবে আসলে এবং সরকারি কোষাগারে জমা পড়লেও সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। সেইসাথে যে টাকা আত্মসাৎ হয়েছে সে টাকার সর্বশেষ গন্তব্য কোথায় এবং কিভাবে গেলো তা সব তদন্তের আওতায় আসবে। ফিন্যান্সিয়াল ইনভেস্টিগেশনে যেসব প্রসিজিউর মানা দরকার সব করা হবে। এর সাথে আরো কেউ জড়িত থাকলেও তদন্ত রিপোর্টে তাদের নাম আসবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন পেয়ে গত সোমবার বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোল্লা আমির হোসেন, সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম, ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু ও শাহী লাল স্টোরের মালিক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার মানসে দুর্নীতি, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক এ. এম. এইচ আলী আর রেজো, চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন চেকে স্বাক্ষর করেন এবং অন্যদের সাথে যোগসাজোশে টাকা আত্মসাত করেন।