চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন বাতায়ন উন্মুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন বাতায়ন উন্মুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সামেক)।
পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার আগেই চিকিৎসা সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলায় প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালে লেজার থেরাপির মাধ্যমে কিডনির পাথর অপারেশন, কিডনি ডায়ালিসিস-সহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। স্থাপিত হচ্ছে ক্যাথ ল্যাব, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, নিজস্ব অক্সিজেন উৎপাদন প্লান্টসহ আধুনিক চিকিৎসাসেবার উন্নত প্রযুক্তি।
সাইক্লোন আইলার পর ২০০৯ সালের ২৩ জুলাই সাতক্ষীরার দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে এসে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই ঘোষণা কাজে লাগিয়ে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকের প্রচেষ্টায় ২০১১ সালে একটি ভাড়া বাড়িতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ সালে নিজস্ব নতুন ভবনে শুরু হয় হাসপাতালের আংশিক চিকিৎসা কার্যক্রম। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গতবছর অক্টোবর থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ পর্যায়ক্রমে ২৫০ বেড হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৫০০ বেড হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। প্রশাসনিক অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে ৫০০ বেড হাসপাতালের। এখন জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হলে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড ৫০০ বেড হাসপাতাল।
শিশুসন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শহরের বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী আবু সালেক বলেন, ‘এই সাতক্ষীরায় যে একটা মেডিকেল কলেজ পাবো- এটা আমরা কল্পনাও করিনি। আমাদের জন্য এটা একটা বড় পাওয়া। আমাদের রোগী নিয়ে খুলনায় যেতে হয়, যশোর যেতে হয়, ভারতে যেতে হয়- তা থেকে আমরা পরিত্রাণ পেয়েছি।’
কলারোয়া থেকে আসা রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি আগে ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। জানতাম না সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ হয়েছে। জানার পর এখন এখানে আসি। এখানকার চিকিৎসার মান খুব ভালো।’
দেবহাটার আব্দুল গফুর বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এত বড় একটা মেডিকেল আমাদের উপহার দেছে এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। সুন্দরবন এলাকার গরিব মানুষ এখানে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।’ এজন্য ডা. রুহুল হকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মো. আনিসুর রহিম বলেন, ‘সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম যেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, ডাক্তাররা সুনাম অর্জন করেছে, তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনাঞ্চল থেকেও সাতক্ষীরায় এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। এটা আমাদের গর্বিত করেছে। এজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই। ভারতে গিয়ে চিকিৎসার জন্য যাতে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় যাতে না হয়, সেই অবস্থা যাতে সৃষ্টি হয়, এটাই আমাদের দাবি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্বপ্নেও দেখিনি সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ হবে। আজ সেটি হয়েছে। এখন আমরা এই স্বপ্ন দেখতে পারি, এই মেডিকেলে ভারতের লোকজনও আগামীতে চিকিৎসা নিতে আসবে।’
সাতক্ষীরা মেডিকেলের একাধিক শিক্ষক ও চিকিৎসক জানান, সাতক্ষীরা থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র দুই ঘণ্টার। যশোর-খুলনার দূরত্বও প্রায় এক। ফলে, এখানকার বহু মানুষ এতদিন চিকিৎসার জন্য কলকাতা বা যশোর-খুলনার ওপর নির্ভরশীল ছিল। মেডিকেল কলেজ চালু হওয়ার পর সেই নির্ভরতা কমতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, এখন দেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসছেন। বিগত কোভিড-১৯ এর ব্যাপক সংক্রমণকালে ঢাকা-চট্টগ্রামের মানুষও সাতক্ষীরা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী ভারতীয়রাও বাংলাদেশের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে সাতক্ষীরা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছে। ভারতের কয়েকজন ক্যানসার রোগীও নাকি এখন গোপনে এসে সাতক্ষীরা মেডিকেলের চিকিৎসকের কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খোদা বলেন, ‘এখন সাতক্ষীরা মেডিকেলে ২৫০ বেড চালু আছে। আমরা ৫০০ বেড চালু করার প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়েছি। এটা সচিব কমিটির মিটিংয়ের অপেক্ষায় আছে। ১৮৫ জন জনবল দেওয়া হয়েছে। এখনো পদায়িত হয়নি। পদায়িত হলে আমরা ৫০০ বেড চালু করতে পারবো। ৫০০ বেডের উপযোগী হিসেবে সকল সুযোগ সুবিধা চালু আছে। পরিপূর্ণ সাতক্ষীরা ৫০০ বেডের হাসপাতালটি চালু হলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এখানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।’