ইউরোপে অবৈধপথে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশের হার গত বছরের তুলনায় কমেছে। ইউরোপিয়ান বর্ডার অ্যান্ড কোস্টগার্ড এজেন্সির (ফ্রন্টেক্স) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল- এই চার মাসে ইউরোপে অবৈধপথে প্রবেশের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান প্রধান অভিবাসন পথে অবৈধ প্রবেশের হার কমেছে। বলকান অঞ্চল দিয়ে প্রবেশের এ হার ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। আর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রবেশ কমেছে ৩ শতাংশ।
২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে মধ্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ১৫ হাজার ৭১৮ অবৈধ অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করেন।
ফ্রন্টেক্সের তথ্যানুসারে, এই সংখ্যা ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সমান। মার্চ মাসে প্রবেশের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও এপ্রিল মাসে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এই হার প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
চলতি বছরে মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় পথে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশিদের ইউরোপে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে সংঘবদ্ধ নানা চক্র।
এই চক্র ভ্রমণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ যাত্রার ব্যবস্থা করে দেয়— এর মধ্যে ফ্লাইট, ভিসা আবেদনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়াও থাকে। এই যাত্রায় খরচ পড়ে প্রায় ১৩ লাখ (সাড়ে নয় হাজার ইউরো) থেকে প্রায় ১৮ লাখ টাকা (১৩ হাজার ইউরো)।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইউরোপে প্রবেশের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বাধিক সক্রিয় রুট ছিল পূর্ব ভূমধ্যসাগর। এ সময়ে এই রুটে ১২ হাজার ২০০ জনের বেশি অবৈধ অভিবাসীর প্রবেশ রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ।
পশ্চিম আফ্রিকা রুটে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশকারীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪০০ জনে। এই অবৈধ অভিবাসীদের অধিকাংশই মালি, সেনেগাল ও গিনির নাগরিক।
অনেকেই ইউরোপে পৌঁছাতে নিজেকে জীবনের ঝুঁকিতে ফেলেন। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে তারা ভাঙাচোরা নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাত্রা শুরু করেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই সমুদ্রে ডুবে মারা গেছেন ৫৫৫ জন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৩০০ জন।
অন্যদিকে, ইংলিশ চ্যানেল হয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করা অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার ১০০ জন যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ইমরান আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, সচ্ছল জীবনের জন্যই বেশিরভাগ বাংলাদেশি ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশ করতে চান। অবৈধপথে তাদের প্রবেশ বাড়লে ইউরোপে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে নষ্ট হবে।
তিনি বলেন, যেহেতু বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে বাংলাদেশিরা ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপ যাচ্ছেন, তাদের কেউ মাঝপথে মারা গেলে তাদের পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেজন্য সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিত তরুণদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে তাদের বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
এই পদক্ষেপ নেওয়া হলে ধীরে ধীরে অবৈধপথে বাংলাদেশিদের ইউরোপে প্রবেশের সংখ্যা কমে আসবে। সেজন্য সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন এবং এর সফল বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন এই গবেষক।