বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সর্বদলীয় বৈঠক করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। দেশটির পার্লামেন্ট ভবনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সভাপতিত্বে বৈঠকে লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ শিং ও সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। সঙ্গে তার বোন শেখ রেহানা। এস জয়শঙ্কর অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ব্রিফ করেন।
বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বদলীয় বৈঠকটি সে দেশের গণতান্ত্রিক চর্চার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে তুলে ধরে। এ ধরনের সর্বদলীয় বৈঠক সেখানে নতুন কিছু নয়, এর আগেও বহুবার দেখা গেছে। যেকোনো জাতীয় ইস্যু বা সংকট সমাধানে ভারতে দল-মত-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষ ঐক্যবদ্ধ আলোচনার নজির তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ।

এমনকি টানা তিনবারের ক্ষমতায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপিও এই গণতান্ত্রিক চেতনা সমুন্নত রেখেছে। রাজনৈতিক রেষারেষি যতই থাকুক, বিজেপি যেমন তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানায়, তেমনি কংগ্রেসের আন্তরিক সাড়াও মেলে তাতে।

এমনকি পাশ্ববর্তী দেশের একটি সংকটকে এই মুহূর্তে ভারত সরকার খুবই গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে এবং পরোক্ষভাবে এটা তাদের নিজেদের সংকটের মতোই বিবেচনা করছে এবং তা সব দলই অনুভব করছে। এ সময়ে তাদের দেশের জন্য কী ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে, কিংবা সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে, এ জন্য তাদের করণীয় নির্ধারণে নিজেদের কী ভূমিকা হওয়া উচিত— সে পরামর্শ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিতে কার্পণ্য করেনি তারা।

গণতান্ত্রিক এই চেতনার দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীতেও মেলেনি কখনো। না জাতীয় ইস্যুতে, না কোনো রাজনৈতিক সংকটে। বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় নেতিবাচক দিক এটি।

পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটির জাতীয় নির্বাচন ব্যবস্থা, রাষ্ট্র পরিচালনা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও বৈদেশিক নীতি বিশ্বের যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্য অনুসরণ ও অনুকরণীয়। যেকোনো জাতীয় সংকটে সর্বদলীয় আলোচনা ও ভূমিকা পালন তাদের দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্যের চর্চার অংশ হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির ঐতিহ্যে এর অনুপস্থিতি যে দেশের জন্য মঙ্গলকর নয়, তা আমারা বারবার দেখেছি। হত্যা-ক্যু, অভ্যুত্থান, সামরিক শাসন, হানাহানি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনিবার্য পরিণতি।

এবারের ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে এক নতুন প্রজন্ম সামনে এসেছে আমাদের। যারা ঐকবদ্ধ এক বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতিকে দল-মতনির্বিশেষে এক সুতায় বাঁধতে পেরেছে। স্বাধীনতার পর এমন সর্বজনীন জাগরণ ও লক্ষ্যের মিল আমরা আর দেখিনি।

বর্তমান তরুণ প্রজন্মের এই উপহার আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় যেকোনো সংকট-সম্ভাবনায় সর্বদলীয় আলোচনার গণতান্ত্রিক চর্চার সূত্রপাত করবে, এই আশা করা যায়।