সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার কোনো সুযোগ নেই বলেন অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম

ঢাকা অফিস: সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, যখন সময় ছিল তখন সরকার ব্লক রেইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করেছে, নির্যাতন করেছে। ক্ষমা চাওয়ার সময়ও পার হয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তির ঘোষণা ও সংলাপে বসার আহ্বান জানানোর পর শনিবার দুপুরে এক বিবৃতিতে একথা বলেন তিনি। এসময় দমন-পীড়ন করে ৯ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন দমনের চেষ্টা না করতে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণও করেন তিনি।

এর আগে শনিবার সকাল ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই। তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। গণভবনের দরজা খোলা।’ এরপরই সংলাপে বসার সুযোগ নেই জানিয়ে বিবৃতি দেন নাহিদ ইসলাম।

‘জরুরি অবস্থা ও সরকারের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে’ শিরোনামের এই বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯শে জুলাই আমরা কারফিউ ভঙ্গ করে শাটডাউন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের সে বক্তব্য কোনো মিডিয়ায় প্রচার করতে দেওয়া হয় নাই। সে রাতে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম অত্যাচার করা হয় এ ঘোষণার জন্য এবং আন্দোলন প্রত্যাহার ও সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য জবরদস্তি করা হয়।

নাহিদ বলেন, ছাত্রজনতা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিল৷ সরকার দমন-পীড়ন করে সেটিকে সংঘাত ও সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ করে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এবার এরকম পরিস্থিতি হলে কারো জন্যই পরিণতি ভালো হবে না।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে ডিবি অফিস থেকেও আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আমাদের অনশন ও রাজপথে আন্দোলনের কারণে সে পরিকল্পনা সফল হয়নি।

শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চান জানিয়ে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা এখনো শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা কোনো সহিংসতা, প্রতিহিংসা ও প্রাণনাশ চাই না৷ নিরাপত্তা বাহিনীকেও এরজন্য সহযোগিতা করতে হবে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রাজপথে দেখা গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এর দায়ভার নিতে হবে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, রক্ত ঝরলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আমরা ন্যায়বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। কোনো ধরনের দমন-পীড়ন, প্রোপাগাণ্ডা ও ষড়যন্ত্র করে এ আন্দোলন থামানো যাবে না। জরুরি অবস্থা বা কারফিউ ছাত্র-নাগরিক মেনে নেবে না। শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি চাইলে গুলি ও হামলা করার নির্দেশ বন্ধ করতে হবে। অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে।

সরকারের সঙ্গে আর সংলাপে বসার সুযোগ নেই জানিয়ে নাহিদ বলেন, খুনি সরকারের কাছে বিচার চাওয়া বা সংলাপে বসারও সুযোগ আর নেই। ক্ষমা চাওয়ার সময়ও পার হয়ে গেছে। যখন সময় ছিল তখন সরকার ব্লক রেইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করেছে, নির্যাতন করেছে। আখতার হোসেন, আরিফ সোহেলসহ রাজবন্দীদের কারাগারে রেখে আমরা কোনো ধরনের সমঝোতায় যাব না।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান থাকবে খুনি সরকারকে সমর্থন না দিয়ে ছাত্র-নাগরিকের পাশে থাকুন। সরকার জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ালে সেই সরকারের হুকুম শুনতে আপনারা আর বাধ্য নন। ছাত্রদের সাথে মিছিলে যোগ দিন। আমরা পুলিশ নয়, হুকুমের আসামিকে কাঠগড়ায় দাঁড়া করাতে চাই। নিরাপত্তা বাহিনীকে মিছিলে যোগদানের আহ্বান থাকবে।

সবাই শান্তিপূর্ণভাবে আজকের বিক্ষোভ ও আগামীকাল থেকে অসহযোগ কর্মসূচি সফল করুন।

বিবৃতিতে নাহিদ সর্বস্তরের জনতাকে আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ, নেমে আসুন, নেমে পড়ুন। বাংলাদেশের অভিভাবক, নেমে আসুন, নেমে পড়ুন। বাংলাদেশের শিক্ষকেরা, নেমে আসুন, নেমে পড়ুন। বাংলাদেশের শ্রমিকেরা নেমে আসুন, নেমে পড়ুন