আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আলোচিত তোশাখানা মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে দেওয়া ১৪ বছরের কারাদণ্ডের সাজা স্থগিত করেছেন ইসলামাবাদের হাই কোর্ট (আইএইচসি)। তবে অনান্য মামলায় সাজা প্রাপ্ত হওয়ায় মুক্তি পাচ্ছেন না এই দম্পতি।
সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার আইএইচসি প্রধান বিচারপতি আমের ফারুক ও বিচারপতি মিয়াঙ্গুল হাসান আওরঙ্গজেবে দ্বৈত বেঞ্চ এই ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির সাজা স্থগিতের আদেশ দেন। এদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার স্ত্রীর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার আলী জাফর এবং এনএবি প্রসিকিউটর আমজাদ পারভেজও উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে গত ৩১ জানুয়ারি ইসলামাবাদের অ্যাকাউন্টেবিলিটি আদালত দেশটির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রীকে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেন। আদালতের রায়ে বলা হয়, ইমরান খান ও বুশরা বিবি সরকারি কোনও পদেই আগামী ১০ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। পাশাপাশি উভয়কে ৭৮ কোটি ৭০ লাখ পাকিস্তানি রুপি জরিমানাও করা হয়।
এর একদিন পর ইদ্দত পালন না করে এই দম্পতি বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। পরে এই মামলায়ও তাদের সাত বছরের করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার আগে রাষ্ট্রের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের এক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশিকে ১০ বছরের করে কারাদণ্ড দেন দেশটির বিশেষ একটি আদালত।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট তোশাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দণ্ডিত হয়েছিলেন বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার। আদালত রায় দেওয়ার পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) পরে ইমরানের সেই সাজা স্থগিত করে। তবে পরে একটি ডিভিশন বেঞ্চ দোষী সাব্যস্ত করার বিরুদ্ধে ইমরানের আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কারাগারেই রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের কাছ থেকে প্রাপ্ত একটি গহনা বিক্রি করার জন্য দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে নতুন রেফারেন্স দায়ের করে।
দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি আরও অভিযোগ করেছে, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার মেয়াদকালে, ইমরান এবং তার স্ত্রী বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিদেশি বিশিষ্টজনের কাছ থেকে মোট ১০৮টি উপহার পেয়েছিলেন। এসব উপহারের সবগুলো তিনি তোশাখানায় জমা দেননি এবং যেসব উপহার জমা দিয়েছেন— সেগুলো সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে কিনেছেন এবং বাইরে বেশি বিক্রি করে দিয়েছেন।
এছাড়াও রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস বা সাইফার মামলায় ইমরান খান এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তার হাতে এমন রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য আছে যাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথা উল্লেখ আছে।
অভিযোগ রয়েছে, কূটনৈতিক তারবার্তাটি ইমরান খানের হাতে তুলে দেন সাবেক মুখ্যসচিব আজম খান। পরে তারবার্তাটি কোথায় রেখেছেন, ভুলে গেছেন বলে ইমরান খান তাকে জানান এবং বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও সেটা আর ফেরত দেননি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরানের বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশী অভিযান ও মামলায় দিশেহারা পিটিআই। এমনকি নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) ও আদালতের নিষেদ্ধাজ্ঞার কারণে নির্বাচনে দলের প্রতীক ক্রিকেট ব্যাটও ব্যবহার করতে পারেনি পিটিআই প্রার্থীরা।