ঝিনাইদহে সাংবাদিকের মৃত্যু সন্দেহজনক দুই নারী গ্রেফতার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মো. সেলিম মিয়ার (৫৩) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে সড়ক দুর্ঘটনায় সেলিমের মৃত্যু হয়েছে জানা গেলেও শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন না থাকায় তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা অথবা অন্য কোনোভাবে মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ এবং পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করছেন। পরে সন্দেহজনক দুই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার সানিয়ার পাড়া গ্রামের মন্টু মিয়ার স্বামী পরিত্যাক্তা মেয়ে মেরিনা আক্তার(৩০) ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের রবি কর্মকারের মেয়ে রিপা রায়। এ দুই নারী আহত সেলিম মিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। পরবর্তীতে তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করেন।

জানা যায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের হামদহ এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী একটি মটরসাইকেল সেলিম মিয়াকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ২ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নিহত সেলিম মিয়া ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।

নিহতের মেয়ে জামাই ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, তার শ্বশুর বগুড়া থেকে ফিরে এসে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ব্যক্তিগত কাজে আলফালাহ হাসপাতাল এলাকায় যান। কাজ শেষ করে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুতগামী মোটর সাইকেল তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি রাস্তায় পড়ে মাথায় আঘাত পান। গুরুতর আহত অবস্থায় দুই নারী তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে রাত ২টায় তিনি মারা যান।

নিহতের স্ত্রী মমতা বেগম জানান, তার স্বামীর হার্টের রোগ ছিল। চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন মাথার আঘাতে রক্তক্ষরণ ও কার্ডিয়াক সমস্যায় তার মৃত্যু হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতের যে ধরনের চিহ্ন থাকে তার শরীরে এমন কোনো ক্ষত চিহ্ন পাওয়া যায়নি। যে দুই নারী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ওই দুই মহিলাকে ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলেও জানান তিনি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেরিনা জানান, সেলিম এবং তারা হামদহ এলাকায় একই ভবনের দুইটি ফ্লাটে থাকেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে সেলিম ভাই একটি মেয়ের নম্বর দিয়ে শহরের পায়রা চত্বরে বসতে বলেন, পরে সেলিম ভাই মেয়েটিকে বাসায় নিয়ে আসেন। এর এক ঘণ্টা পরে সেলিম ভাইয়ের ওই আত্মীয় ফোনদিয়ে জানান সেলিম সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক আহত হয়েছেন। পরে আলফালাহ হাসপাতালের সামনে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করি এবং হাসপাতাল থেকে তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। মেরিনা আরও জানান, সেলিম ভাই মাঝে মধ্যে তাদের সাহায্য করতেন, ওই মহিলা কে তা তিনি জানেন না।
ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের এএসপি মীর আবিদুর রহমান বলেন, সেলিম মিয়ার মৃত্যুতে রহস্য লুকিয়ে আছে। এটি হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করছেন তিনি।
এদিকে সাংবাদিক সেলিম মিয়ার মৃত্যুতে ঝিনাইদহ সাংবাদিকদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বুধবার সকালে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন তার গ্রামের বাড়িতে যান এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম রায়হান ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান টিপু সাংবাদিক আবু সেলিম মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা এক বিবৃতিতে সেলিম মিয়ার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং হত্যার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।