বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

Share

যশোর প্রতিনিধি 
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের রাজস্ব কর্মকর্তা উদ্ভব চন্দ্র পালের বিরুদ্ধে আমদানিকৃত পণ্য খালাসে ব্যাপক অনিয়ম, হয়রানি ও সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে লক্ষাধিক টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তার এসব কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছেন প্রশাসনিক রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপার) শফিকুল ইসলাম—এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা।
অভিযোগ অনুযায়ী, শফিকুল ইসলামের দায়িত্ব থাকলেও বেনাপোল কাস্টমস হাউজের ৪ নম্বর শুল্কায়ন গ্রুপে তিনি নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন না। অফিস সময়ে মাত্র দেড় ঘণ্টা শুল্কায়নের কাজ করে বাকি সময় রাজস্ব কর্মকর্তা উদ্ভব চন্দ্র পালের সঙ্গে প্রশাসন দপ্তরে বসে অনিয়মে জড়িত থাকেন বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। এর ফলে চার নম্বর শুল্কায়ন গ্রুপের কার্যক্রমে ধীরগতি তৈরি হয়েছে এবং বন্দরের সামগ্রিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি যোগদান করা রাজস্ব কর্মকর্তা উদ্ভব চন্দ্র পাল বর্তমানে বেনাপোল বন্দরের ৩ নম্বর পরীক্ষণ গ্রুপের দায়িত্বে রয়েছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই প্রশাসনিক সুপার শফিকুল ইসলামের সহযোগিতায় তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ফাইলপ্রতি নির্ধারিত অঙ্কের টাকা না দিলে তিনি স্বাক্ষর করেন না। অনেক সময় মালামাল পরীক্ষণে যান না। আবার পরীক্ষণে গেলে নানা অজুহাত দেখিয়ে ‘এটা হবে না, ওটা করা যাবে না’—এভাবে আমদানিকারকদের হয়রানির শিকার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর ফলে আমদানিকারকরা এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বিশেষ করে পচনশীল ও ফলজাতীয় পণ্য আমদানিতে সমস্যা চরমে পৌঁছেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা আরও অভিযোগ করেন, পচনশীল পণ্য সাধারণত কমিশনারের অনুমতিক্রমে ভারতীয় ট্রাক থেকে বাংলাদেশি ট্রাকে খালাস করা হয়। কিন্তু রাজস্ব কর্মকর্তা উদ্ভব চন্দ্র পালের দাবি, ট্রাকপ্রতি ১০ হাজার টাকা না দিলে গাড়ি থেকে গাড়িতে খালাসের অনুমতি দেওয়া হবে না। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো কর্মকর্তা প্রতিবাদ করলে প্রশাসনিক সুপার শফিকুল ইসলামের পরামর্শে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়ে অন্যত্র বদলির হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বাগেরহাটের পান ব্যবসায়ী সরাফত ইসলাম বলেন, “গত সাত-আট বছর ধরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পান আমদানি করছি। কিন্তু বর্তমানে রাজস্ব কর্মকর্তা উদ্ভব চন্দ্র পালের কারণে আমরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। গাড়িপ্রতি মোটা অঙ্কের টাকা দিলে সমস্যা হয় না, কিন্তু এক গাড়ি পান আমদানি করে আমাদের লাভ থাকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সেখানে যদি গাড়িপ্রতি ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়, তাহলে ব্যবসা করা অসম্ভব। বাধ্য হয়ে এখন বেনাপোল বন্দর দিয়ে পান আমদানি বন্ধ করেছি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেনাপোলের এক সিএন্ডএফ প্রতিনিধি জানান, আগে প্রতিদিন যেখানে ৫০ থেকে ৭০টি কাঁচামাল ও ফলজাতীয় পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি হতো, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ থেকে ১৫টিতে। অধিকাংশ আমদানিকারক এখন সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর ব্যবহার করছেন।
তিনি আরও বলেন, “কাস্টমসে কিছুটা স্বচ্ছতা ফিরলেও দু-একজন কর্মকর্তার অনিয়মে আমরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। বিশেষ করে পরীক্ষণ গ্রুপ-৩ এর রাজস্ব কর্মকর্তা উদ্ভব চন্দ্র পাল কাঁচামাল আমদানিতে নানা অজুহাতে হয়রানি করেন। গাড়িপ্রতি মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। স্বচ্ছভাবে কাজ করতে গেলে আমাদের অসহযোগিতা করা হচ্ছে।”
অভিযোগে আরও বলা হয়, গত এক মাসে পরীক্ষণ গ্রুপ-৩ থেকে প্রায় ২০ জন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আনুমানিক ২৭ লাখ টাকা উৎকোচ আদায় করা হয়েছে। এ কাজে ফল ব্যবসায়ী শামিমের কর্মচারী তৌহিদ ও জিয়া নামে দুজন ব্যক্তি ঘুষ সংগ্রহ করেন। আদায়কৃত টাকার প্রায় ৪০ শতাংশ প্রশাসনিক সুপার শফিকুল ইসলামকে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের এক নেতা বলেন, “আমরা বারবার পরীক্ষণ গ্রুপ-৩ ও শুল্কায়ন গ্রুপ-৪ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশ্বাস পেলেও এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকারের রাজস্ব আদায়ে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, তাদের দ্রুত অপসারণ করা উচিত।”
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আবু হোসেন মোহাম্মদ খালিদ বলেন, “বেনাপোল কাস্টমসে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। শতভাগ সম্ভব না হলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। আমদানি কিছুটা কম হলেও কাজের গতি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।”

Read more