কেশবপুরে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে ডাকা কর্মসূচী প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্থগিত

যশোর প্রতিনিধি 
যশোরের কেশবপুরের শিকারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাতার হোসেনের অপসারণের দাবিতে ডাকা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি থানা পুলিশ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যখন-তখন শিক্ষর্থীদের সাথে অশালীন আচরণের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার শিকারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী ওই কর্মসূচির ডাক দেয়।
এদিকে, কর্মসূচি শুরুর পূর্বে থানার এস আই অসিম এসে আন্দোলনকারীদের জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ব্যাপারে আমার মাধ্যমে বিচারের আশ^াস দিয়েছেন। ওই আশ^াস পেয়ে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। অপরদিকে, ওই কর্মসূচি ঠেকাতে প্রধান শিক্ষক বৃহস্পতিবার স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিফিন না দিয়ে সকাল থেকে স্কুল কক্ষে আটকে রাখেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়েছেন অভিভাবকরা। তাদের দাবি প্রধান শিক্ষক ছেলে-মেয়েদের টিফিন না দিয়ে তাদের ওপর মানসিক নির্যাতন করেছেন। স্কুল চলাকালীন প্রতিদিন দুপুর ১টায় বাচ্ছাদের টিফিন দেয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি বৃহস্পতিবার টিফিন দেননি। ২টা ১৫ মিনিটের দিকে অভিভাবক ও এলাকাবাসী এবং থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে টিফিন দেয়া হয় বলে অভিভাবকরা সাংবাদিকদের জানান। তাদের অভিযোগ পূর্বঘোষিত কর্মসূচির কারণে প্রধান শিক্ষক ক্ষিপ্ত হয়ে বাচ্চাদের টিফিন না দিয়ে শ্রেণিকক্ষে আটকে রেখে শিশু নির্যাতনের অপরাধ করেছেন।
গতকাল সরেজমিন গেলে শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে জানায়, তাদের স্কুল প্রতিদিন ১টায় টিফিন দেয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার তাদেরকে টিফিন দেয়া হয়নি। পরে তাদের পিতা-মাতা ও থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে ২টা ১৫ মিনিটের সময় প্রধান শিক্ষক টিফিন দিতে বাধ্য হন। তারা আরও জানায়, সময় মত টিফিন না দেয়ায় তাদের প্র¯্রাব-পায়খানার বেগ লাগলেও তারা বাথরুমে যেতে পারেনি এবং তাদের চরম ক্ষুদার যন্ত্রনা সইতে হয়েছে।
শিকারপুর স্কুলের অভিভাবক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের অশালিন আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এটি কোনভাবেই কাম্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি নেই আজ প্রায় তিন বছর, এর জন্যও প্রধান শিক্ষক একাই দায়ি। আমাদের নিজেদের স্কুল, এর ভালোমন্দ দেখার দায়িত্বও আমাদের। প্রধান শিক্ষক মোতাহার হোসেন স্কুলের ভালোর পরিবর্তে নিজের ভালো দেখতে যেয়ে স্কুলটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। উনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে বিচার করবে; আগামী সোমবারের মধ্যে যদি বিচার না হয়, তাহলে এরপর কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে।’
অভিভাবক জালাল উদ্দিন বলেন, ছেলে-মেয়েদের সাথে প্রধান শিক্ষক মোহাতার হোসেনের দীর্ঘদিনের অশালিন আচরণ ও শিক্ষার্থীদের ওপর নানাভাবে নির্যাতনে তারা অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। এসব ঘটনায় তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এলাকাবাসী বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত এই স্কুলে কোনদিন সমস্যা হয়নি। এটি উপজেলার মধ্যে একটি নামকরা ও পুরাতন স্কুল। মোতাহার হোসেন প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর থেকে একের পর এক সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৩ বছর কোন ম্যানেজিং কমিটি ছাড়াই চলছে স্কুলটি, যে কারণে প্রধান শিক্ষক যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ ছাত্রছাত্রীদের সাথে অশালিন আচরণ করেছেন, যা আমরা মুখে বলতে পারছি না। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা এর একটি কঠোর বিচার কামনা করছি।
ঘটনাস্থলে আসা থানার এস আই অসিম বলেন, অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি অভিযোগ করেছেন। নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের মাধ্যমে বিচারের আশ^াস দেয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
শিকারপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাতার হোসেন বলেন, তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ডাকার কারণে বিশৃংখলার ভয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের ১টার পরিবর্তে ২টা ১৫ মিনিটের সময় টিফিন দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। এছাড়া প্রতিষ্টানের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন এবং থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তাদের কর্মসূচি আজ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে তিনি এসব ঘটনায় অভিভাবকদের সাথে বসবেন বলে জানান।