ঢাকা অফিস : নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপ হবে না বলে সাফ জানি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে আন্দোলনকারীদের চাহিদার শেষ নেই, তাদের সঙ্গে সংলাপ নয়।
সোমবার বিকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তরপর্বে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে সময় কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি সড়কে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ করছিল। তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী আলোচনার জন্য ডেকেছেন। একই গোষ্ঠীর বাংলাদেশে অবস্থানকারীদেরকে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ডাকবেন কিনা।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যারা ছিল তারা বৃষ্টিতে ঠান্ডায় কষ্ট করছিল। এজন্য বলেছি, কষ্ট করার কী দরকার। তারা এসে বলুক কী চায়। আর বাংলাদেশে যারা তাদের বিষয় ভিন্ন। তাদেরকে কীসের জন্য আলোচনায় ডাকতে যাব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে আন্দোলনকারীদের চাহিদার শেষ নাই, তাদের সঙ্গে সংলাপ নয়। দেশে তারা (আন্দোলনকারীরা) ইচ্ছে করে রোদে কষ্ট করলে করুক। আমার কী করার আছে।
তিনি বলেন, তারা যত পারে আন্দোলন করুক আমার কোনো ব্যাপার না। আমি আমার জনগণের সঙ্গে আছি। জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, জনগণের আস্থা বিশ্বাসই আমার একমাত্র শক্তি। মা-বাবা ভাই সবাইকে হারিয়েছি। আমার আর কী হারাবার আছে। আমি আমার দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
মানুষের কল্যাণে কাজ করে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ যত বেশি কাজ করে, তার পেছনে সবাই লেগে থাকে। এটাই তো নিয়ম। এসব আমি কেয়ার করি না। আমি দেশের জন্য কাজ করি মানুষ ভাল থাকুক সেটাই চাই। মানুষের কল্যাণ করাই আমার একমাত্র কাজ আমি সেটা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে, অনেকের এটা পছন্দ হবে না। কারণ যারা স্বাধীনতা বিরোধিতা করেছে, যারা গণহত্যা সমর্থন করেছে, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে তাদের এগুলো পছন্দ হবে না। তারা আমার বিরুদ্ধে শত্রুতা করে যাবেই।
প্রশ্নোত্তোর পর্বে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা সংকট ও ভয়ের কী আছে। সংকট ও ভয়ের কিছু নেই। আমরা পরনির্ভরশীল নই। সংকট ও ভয়ের কিছু নেই। যেটা নিয়ে সংশয় আছে সেটা উৎপাদন করব।
আরও পড়ুন—নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, ডলার সংকট বিশ্বব্যাপী। করোনা ও ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে ডলার সংকট, মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। আমাদের যেটুকু থাকার দরকার…তিন মাসের খাদ্য মজুদের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু আছে। আমাদের যে পরিমাণ রিজার্ভ দরকার ততটুকু আছেই। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ডলার ছিল এক বিলিয়নের কম। এখন রিজার্ভ আছে ৩১ বিলিয়ন ডলার।
সরকারপ্রধান বলেন, যাদেরকে দিয়ে আমরা জঙ্গিবাদ দমন করেছি তাদের ওপর স্যাংশন দিয়েছে। আমি মন্ত্রণালয়ে বলে দিয়েছি যারা স্যাংশন দেবে তাদের কাছে থেকে কিছু কেনা যাবে না। এটা পরিষ্কার। এতে সংকট ও ভয়ের কী আছে। সংকট ও ভয়ের কিছু নেই। আমরা পরনির্ভরশীল নই। সংকট ও ভয়ের কিছু নেই। যেটা নিয়ে সংশয় আছে সেটা উৎপাদন করব।
নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদেরকে কী কারণে স্যাংশন দিলো? যাদেরকে দিয়ে আমরা সন্ত্রাস দূর করলাম। যেমন সারা বিশ্ব জঙ্গিবাজে জর্জরিত সবাই আতংকগ্রস্ত সেই সময় আমাদের দেশে একটা ঘটনা ঘটলো হলি আর্টিজান হামলা। অনেকেই বলছিলো এটা বাংলাদেশে একা সামাল দিতে পাড়বে না। কিন্তু আমাদের তো ২৪ ঘণ্টাও লাগেনি। তার মধ্যে আমরা উদ্ধার করলাম, মানুষকে জীবীত উদ্ধার করলাম। যারা এটার সঙ্গে জড়িত তাদের ওপরও আমরা আঘাত আনতে পেড়েছি। তারপর থেকে বাংলাদেশে এরকম বড় ঘটনা ঘটেনি। ঘটাতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা তাদের নজরদারি এবং তারা অনেক ভালোভাবে বিষয়টায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছে। এরপরও স্যাংশনটা কীসের জন্য? সেটিও তো আমার প্রশ্ন? আমি এজন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছি। আমরা বিদেশ থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করি সেখানে আমাদের একটা ক্লজ থাকবে, যারা আমাদের ওপর স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করব না। এটা আমার পরিষ্কার কথা। এ নিয়ে সংকট আর ভয়ের কী আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখন কারো প্রতি নির্ভরশীল না। যেটা নিয়ে সমস্যা হয় আমরা সেটা উৎপাদন করে সমস্যার সমাধান করতে পারি। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এখন আমাদের দেশের মানুষ জমিতে চাষ করছে, ফসল আসছে। বিশ্বব্যাপী যেখানে মূল্যস্ফীতি, যেখানে খাদ্যের অভাব- উন্নত দেশে এক লিটারের বেশি তেল কেনা যাবে না, তিনটার বেশি টমেটো কেনা যাবে না, ছয়টার বেশি ডিম কেনা যাবে না, এতোটুকু মাংস কেনা যাবে না, সুপার মার্কেটগুলো খালি, এটা হচ্ছে উন্নত বিভিন্ন দেশের অবস্থা। সেদিক থেকে আমাদের মানুষ অনেক ভালো। রোজার সময় আমাদের দেশে কোনো ধরনের হাহাকার শোনা যায়নি। আমাদের দেশে সবাই সবাইকে সহযোগিতা করে। আমার দলসহ সহযোগী সংগঠনকে বলে দিয়েছি কেউ বিপদে পড়লে সহযোগিতা করার জন্য।
‘কথা নাই, বার্তা নেই অমনি স্যাংশন দেওয়ার ভয় দেখানো হলো। যারা আমাদের সপ্তম নৌবহর দিয়ে ভয় দেখিয়েছিল, আমরা তাও জয় করেছি। তারা স্যাংশন দেবে, এই ভয় পেলে চলবে না। আমরা কারও ওপর নির্ভর করি না। এটা ভুললে চলবে না। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। আমাদের যতটুকু আছে আমরা তা উৎপাদন করলেই হবে। আমরা কোনো জমি অনাবাদি রাখব না। আমরা উৎপাদন করতে জানি, ফসল ফলাতে জানি’—বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আমাদের দেশের কিছু মানুষই দেশের বদনাম করে, এটাই দুর্ভাগ্য উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, রাজনীতি যখন করি বিরোধিতা করবে সমালোচনা থাকবে। ২০০৮ সালে আগে দেশ কোথায় ছিল, আমরা ক্ষমতায় আসার পরে এখন দেশ কোথায় আছে। তবে এক শ্রেণির লোকজনই থাকে সমালোচনা করার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার থাকবে, স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব শেখ হাসিনা বলেন, আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান, এরাশাদের আমল থেকেই নদী খেকো সৃষ্টি। আওয়ামী লীগে সরকার আসার পরে নদী দখল কমেছে। বহু নদী, পুকুর খাল, উদ্ধার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সাল থেকেই বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি শুরু করেছে। যারা নদী খেকো তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। যারা নদী খেকো তাদের নাম যদি থাকে তা দেখে নেব। মতিঝিল বিশাল ঝিল ছিল, আইয়ুব খান ক্ষমতা আসার পরে তা দখলে চলে গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই নদী খাল, বিল, দখল মুক্তি করেছে এবং বিভিন্ন বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের উপনেতা ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম,পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম,সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেনসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।