ঢাকা অফিস : নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন চেয়ে আবেদন বাতিল হওয়া ‘বাংলাদেশ জাতীয় দল’ আদালতে যাবে। এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দলটির চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলছেন, নিবন্ধন পেতে তারা ইসির সব শর্তই পূরণ করেছিল। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন দিতে ২০২২ সালের মে মাসে আবেদন নেওয়া শুরু করে নির্বাচন কমিশন। দুই মাস সময় বাড়িয়ে গেল ৩০ অক্টোবর শেষ সময় পর্যন্ত মোট ৯৩টি আবেদন জমা পড়ে। কয়েক দফা যাচাইয়ের পর ৯৩টি দলের মধ্যে ৮১টি আবেদন বাতিল হয়। বাকি এক ডজন দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্য নেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ এহসানুল হুদা এই ১২টি রাজনৈতিক দল কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন পাচ্ছে সে বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের নিবন্ধনের বিষয়ে আদালতে যাবো। ইসি একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘দলের নিবন্ধন পাওয়ার তিনটি শর্তের মধ্যে আমরা দ্বিতীয় শর্ত (আ) ধারা অনুযায়ী আবেদন করি। যে শর্তের মধ্যে উল্লেখ আছে যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর হতে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে যেকোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত নির্বাচিত এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোট সংখ্যার শতকরা পাঁচ ভাগ ভোট লাভের সমর্থনে কমিশন কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়ন পত্র দিতে হবে।
‘বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ সিরাজুল হুদা ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তৎকালীন ময়মনসিংহ-২৩ বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে খেজুর গাছ মার্কা প্রতীকে নির্বাচন করে প্রদত্ত ভোটের ১২.৭ শতাংশ ভোট পান।
সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে প্রদত্ত ভোটের ফলাফলের দালিলিক বিবরণ দাখিল করে কমিশনের নিকট প্রত্যয়নপত্রের জন্য আবেদন করি। তারা পত্র মারফত জানায় কমিশনের তথ্য সংরক্ষিত না থাকায় প্রত্যয়নপত্র প্রদান করা সম্ভব নয়। তথ্য সংরক্ষিত নাই কথাটা বলা একেবারে অযৌক্তিক।
তিনি আরও বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, ১২.৭ শতাংশ ভোট পাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়ে কমিশন আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করে যেন আমরা নতুন কোনো দলের জন্য নিবন্ধনের দরখাস্ত করেছি। তারা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের নাম পদবীর সঙ্গে এনআইডি নম্বরসহ অনেককিছু দিতে বলে যা নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত আবেদনপত্রের সঙ্গে আবশ্যকীয় দলিলাদি বহির্ভূত।
এহসানুল হুদা বলেন, ‘চূড়ান্তভাবে কমিশন উল্লেখ করেছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯০ খ (১) (ক) (আ) এর শর্ত প্রতিপালিত না হওয়ায় কমিশনের নিকট দলটি নিবন্ধের যোগ্য বিবেচিত হয়নি। অথচ কমিশন গণপ্রতিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর যে ধারা উল্লেখ করে জাতীয় দলের শর্তপূরণ হয়নি বলে নিবন্ধন অযোগ্য ঘোষণা দিয়েছে, সেই ধারায় একমাত্র শর্ত হচ্ছে, ৫ শতাংশ ভোট প্রাপ্তি। যেটা জাতীয় দল দ্বিগুণেরও বেশি অর্থাৎ ১২.৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনের দেয়া প্রত্যয়ন পত্র জমা দেয়া হয়েছে। এই ১২.৭ শতাংশ ভোট প্রাপ্তি এবং কমিশনের দেয়া প্রত্যয়নপত্রের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে নির্বাচন কমিশন নজিরবিহীন একটি মন্দ নজির সৃষ্টি করেছে।
জাতীয় দলের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা আইনের আশ্রয় নিয়ে প্রমাণ করবো বাংলাদেশ জাতীয় দল নির্বাচন কমিশনের বিধি মোতাবেক নিবন্ধন পাওয়ার শতভাগ যোগ্য। আমাদের অধিকার বঞ্চিত হওয়া এবং ক্ষোভ দুঃখের বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানিয়ে দিলাম।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আহাদ, সারোয়ার আলম, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাবিব লিটন, জিয়াউল হক জিয়া ও প্রচার সম্পাদক বেলায়েত হোসেন শামীমসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।