মহা জাল-জালিয়াতি যশোর রেজিস্ট্রি অফিস

যশোর প্রতিনিধি: যশোর রেজিস্ট্রি অফিসে মহা জাল-জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। সাব রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর জাল করে প্রায় দুই শত নকল উত্তোলন করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুরো রেজিস্ট্রি অফিস জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অফিসে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও জালিয়াতকারীরা এখনো রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দুর্নীতিবাজরা। তারা ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, যশোর রেজিস্ট্রি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে জাল-জালিয়াতির কারবার চলে আসছে। বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রার জানলেও অজ্ঞাত কারণে জালিয়াতি চক্রর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। যে কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জালিয়াত চক্রটি। ফলে এখানে যে কোন কাজ সহজেই জালিয়াতি করা যায়।
সূত্র জানায়, গত ২৮ মার্চ মঙ্গলবার নকল নবিশ ইসমাইল হোসেন সাব রেজিস্ট্রার অমায়িক বাবু’র স্বাক্ষর জাল করে প্রায় ২০০ নকল স্বাক্ষর করে। বিষয়টি সিসিটিভিতে স্পষ্ট দেখাও যায়। সিসিটিভি ফুটেজে নকল নবিশ ইসমাইল হোসেন নিজের টেবিলে বসে স্বাক্ষর করছেন। বিষয়টি ধরা পড়ার পর জেলা রেজিস্ট্রার আসাদুল ইসলামকে জানানো হয়। জেলা রেজিস্ট্রার বিষয়টি জেনেও নিশ্চুপ রয়েছেন। তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জালয়াত চক্রটি। তার এই নিশ্চুপয়তায় প্রমাণ করে তিনি দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করে চলেছেন।
অফিসের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, রেজিস্ট্রি অফিসের পাহারাদার থেকে শীর্ষ কর্তারা অনিয়ম-দুনীতির সাথে ওৎপ্রোৎভাবে জড়িত। সকলেই যেহেতু ঘুষ-দুর্নীতির সাথে জড়িত যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেউই ব্যবস্থা নিতে চায় না।
সূত্র জানায়, নকল প্রতি সাব রেজিস্ট্রারের ৮০ টাকা দিতে হয়। ২০০ নকলে অন্তত: ১৬ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন সাব রেজিস্ট্রার। এই টাকা না দেওয়ার জন্যই সাব রেজিস্ট্রিার অমায়িক বাবু’র স্বাক্ষর জাল করে চক্রটি।
স্বাক্ষর জালের বিষয়ে নকল নবিশ ইসমাইল হোসেন বলেন, ভৈরব-নূর নবীরা আমার কাছে স্বাক্ষর করার জন্য দিয়েছিলো। আমি তাদের কথামত সই করে দিয়েছি। সাহেব তো থাকে না। মানুষ এসে ফিরে যায় যে কারণে সই করেছি।
রেজিস্ট্রি অফিসের নকলের দায়িত্ব পালন করেন রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী। তার ইন্ধনেই এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্র জানায়।
বিষয়টি জানতে চাইলে রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, আমি কয়েকটা দলিল ইসমাইল হোসেনকে দিয়েছিলাম তারিখ বসানোর জন্য। আমার নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। একটি পক্ষ লাভবান হওয়ার জন্য এ চক্রান্ত চালাচ্ছে।
সূত্র জানায়, যশোর সদরের সাব রেজিস্ট্রার ইমরুল হাসান অসুস্থ্য জনিত কারণে ছুটিতে রয়েছেন। তিনি ছুটিতে থাকার কারণে চৌগাছা সাব রেজিস্ট্রার মোস্তাক আহমেদ, মণিরামপুরের সাব রেজিস্ট্রার পারভেজ খান ও কেশবপুরের সাব রেজিস্ট্রার অমায়িক বাবু পর্যায়ক্রমে সাময়িক দায়িত্ব পালন করেন।
জানতে চাইলে সব রেজিস্ট্রার অমায়িক বাবু বলেন, আমি তো বিষয়টি জানি না। আপনার কাছ থেকে শুনলাম। আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) অফিসে যাব। তারপর দেখে সব কিছু বলতে পারবো। কেউ যদি আমার স্বাক্ষর জাল করে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে জেলা রেজিস্ট্রার আসাদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, কোন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা দ-নীয় অপরাধ। যারা এ কাজে যুক্ত তাদেরকে আইনের আওতায় আসতে হবে। তিনি আগামী বুধবার অফিসে আসতে বলেন। সামনা সামনি বসে কথা হবে।