যে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে চূর্ণ হয়ে যায় ইসরায়েলের দম্ভ

Share

২০২৫ সালের জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ‘সিজ্জিল-২’ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তোলে। এটি কেবল একটি অস্ত্রই নয়, বরং ইরানের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে।

ইরানের অগ্নিদূত ‘সিজ্জিল’

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ–৩’ অভিযানের দ্বাদশ ধাপে প্রথমবারের মতো সিজ্জিল–২ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার কর হয়, যা অত্যন্ত বিধ্বংসী ক্ষমতার একটি ওয়ারহেড বহন করছিল। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল মোহসেন রেজায়ি জানান, আইআরজিসি ‘সুপারহেভি সিজ্জিল’ ও ‘হাইপারসনিক ফাত্তাহ’ ক্ষেপণাস্ত্রের যুগল আঘাত ব্যবহার করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটায়।

‘কোবরা–আকৃতির’ সর্পিল আলোকরেখা এঁকে চলতে থাকে সিজ্জিল-২

১৮ জুন রাতে নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্রটি যখন আকাশে উড়ে যায়, তখন তেহরান ও ইরানের কেন্দ্রীয় প্রদেশগুলোর বাসিন্দারা একটি রহস্যময় দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন—একটি উজ্জ্বল আলোর বিন্দু, যার পেছনে সাপের মতো পেঁচানো ধোঁয়ার রেখা। এক পর্যায়ে সেই জ্বলন্ত বস্তুটি বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিগোলকে রূপ নেয় এবং পথ বদল না করে, আকাশে এক ‘কোবরা–আকৃতির’ সর্পিল আলোকরেখা এঁকে চলতে থাকে।

কৌতূহলী নাগরিকেরা প্রথমে ধারণা করেছিলেন, এটি হয়তো কোনো বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, শত্রুপক্ষের হামলা কিংবা কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা—যেমন উল্কাবৃষ্টি।

কিন্তু দ্রুতই পশ্চিমমুখী এর গতিপথ সব রহস্য দূর করে দেয়, এটি ছিল ইরানেরই একটি ক্ষেপণাস্ত্র, যা ‘ট্রু প্রমিজ–৩’ অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

সামরিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করে যে, এই চমকপ্রদ দৃশ্যটির কারণ ছিল দুই ধাপবিশিষ্ট ‘সিজ্জিল–২ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’, বিশেষ করে প্রথম ধাপের জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেটির আলাদা হয়ে যাওয়ার মুহূর্ত।

আইআরজিসির জনসংযোগ দফতর জানায়, অভিযানের দ্বাদশ ধাপ ‘অতি ভারী, দীর্ঘ-পাল্লার, দুই-ধাপবিশিষ্ট সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।

নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া

সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রথম ভিডিওটি যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তখন বিশ্ব এমন একটি দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে যা সহজে ভোলা যায় না। ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের সাদা এবং কমলা রঙের ধোঁয়ার অসাধারণ দৃশ্য আকাশে শোভা পায়। এই নয়নাভিরাম দৃশ্যটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এই দৃশ্যকে ‘ইরানের অগ্নিদূত’ বা ‘প্রতিশোধের অগ্নিদূত’ বলে অভিহিত করেন।

কেউ কেউ বলেছিলেন—উড়ে যাবার দৃশ্যটি এমন কিছুর মতো যা আমরা কেবল সায়েন্স ফিকশনে দেখি। আবার কেউ কেউ এর শক্তি, সৌন্দর্য ও জাঁকজমকের কথা বলেছেন। কিন্তু দৃশ্যমান প্রভাবের চেয়েও যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হলো— এই ক্ষেপণাস্ত্র এ বার্তাই তুলে ধরেছে যে, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ইরান একটি বড় শক্তি।

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, যুদ্ধ এখন আর কেবল যুদ্ধের ময়দানেই সীমাবদ্ধ নেই বরং যুদ্ধের নানা কৌশল ও দিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, থ্রেড, মিম পেজ এবং বিশ্লেষণমূলক ভিডিওগুলোতে যে বিষয়গুলো বারবার আলোচিত হচ্ছে তা হলো— ইরানের তৈরি সিজ্জিল কেবল একটি ক্ষেপণাস্ত্র নয় বরং এটি স্বাধীনতা এবং ইরানের জাতীয় প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

সিজ্জিল-২ ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য ১৮ মিটার, ব্যাস ১.২৫ মিটার, লঞ্চ ওজন ২৩.৬ টন

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাসহ উৎক্ষেপণের নাটকীয়তা

উৎক্ষেপণের পর আকাশে যে সাপ বা মাছের লেজ বা ঘূর্ণি রূপের ধোঁয়া দেখা যায়, তা উচ্চগতির বায়ুপ্রবাহ ও রকেটের বডির সঙ্গে ঘর্ষণ কিংবা প্রোপেল্যান্টের কণার কারণে ঘটে। এমন দৃশ্য দেখা যায় রুশ ইয়ার্স বা আমেরিকার মিনটম্যান ধাঁচের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রেও। উচ্চতায় এসে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে নামলে রকেট পৃষ্ঠে থাকা জলীয় বাষ্প স্ফটিকে পরিণত হয়ে আলো প্রতিফলিত করে। ফলে দর্শনীয় ধোঁয়ার পথ তৈরি হয়। এটা প্রযুক্তিগত দক্ষতারও ইঙ্গিত দেয় অর্থাৎ উৎক্ষেপণ ফেজে উচ্চ স্থিতিশীলতা ও বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় ছিল।

সিজ্জিলের শক্তি-সামর্থ্য

সিজ্জিল–২ ইরানের প্রথম যুগের কঠিন-জ্বালানিভিত্তিক দুই-স্তরবিশিষ্ট মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে বিবেচিত। কঠিন জ্বালানি থাকার কারণে এটিকে লম্বা সময় লঞ্চ-রেডি রাখা যায়, ফলে প্রস্তুতি ও উৎক্ষেপণের সময় ঘণ্টার বদলে মিনিটে নেমে আসে। একই প্রযুক্তিগত ধারাকে কাজে লাগিয়ে ইরান পরবর্তী সময়ে ফাত্তাহ সিরিজের মতো হাইপারসনিক উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রও তৈরি করেছে। দুটি ক্ষেপণাস্ত্রই দুই-ধাপ এবং কঠিন জ্বালানিনির্ভর হলেও তাদের ভূমিকায় পার্থক্য আছে। ফাত্তাহ–১ খুব উচ্চ গতিতে (টার্মিনাল গতি মাখ-১৩–১৫) ও গতি মনিপুলেশনে দুর্দান্ত; এটি ছোট কিন্তু দ্রুত, ম্যানুভারেবল এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জিং। ফাত্তাহ–১ ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষ তাপ–প্রতিরোধী পদার্থ দিয়ে তৈরি এবং ১,৪০০ কিলোমিটার পাল্লার একটি নিখুঁত নির্দেশনাযুক্ত রকেট।

ফাত্তাহ–১ প্রায় ১,০০০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহন করতে পারে, যার মধ্যে ৩৫০–৪৫০ কেজি হলো বিস্ফোরক উপাদান।

ফাত্তাহ–১ এবং এর উন্নত সংস্করণ ফাত্তাহ–২ (যার সঙ্গে ২০০ কেজির হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল বা এইচজিভি যুক্ত) অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্র হলেও, ওয়ারহেডের ওজন ও আঘাতের ক্ষমতায় তারা সিজ্জিল–২–এর সমকক্ষ নয়। ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১.৫ মিটার, ব্যাস ৮০ সেমি এবং মোট ওজন ৪ থেকে ৪.৬ টন।

ইরান থেকে ছোঁড়া সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্রের সাদা এবং কমলা রঙের ধোঁয়ার অসাধারণ দৃশ্য আকাশে শোভা পায়

অন্যদিকে, সিজ্জিল–২ অনেক বড় এবং শক্তিশালী—এর দৈর্ঘ্য ১৮ মিটার, ব্যাস ১.২৫ মিটার, আর লঞ্চ ওজন ২৩.৬ টন—অর্থাৎ ফাত্তাহ–এর তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি ভারী।

লক্ষ্যের দূরত্ব অনুযায়ী, সিজ্জিল–২ প্রায় ৭০০ কেজি পে–লোড ২,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বা ১,৫০০ কেজি (১.৫ টন) পে–লোড ১,০০০ কিলোমিটার দূরত্বে নিক্ষেপ করতে সক্ষম—যা সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের ভেতর পড়ে।

প্রযুক্তিগত স্পেসিফিকেশন

রিপোর্টগুলোতে উল্লিখিত মূল প্রযুক্তিগত স্পেসিফিকেশনগুলো হলো:
দৈর্ঘ্য: প্রায় ১৮ মিটার
ব্যাস: ১.২৫ মিটার
লঞ্চ ওজন: ২৩ টন
সর্বোচ্চ পাল্লা: রিপোর্টে ১,০০০–২,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উল্লেখ; অন্য রিপোর্টে ২,০০০+ কিলোমিটারও বলা হয়েছে।

ওয়ারহেড বহনক্ষমতা: আনুমানিক ৬৫০–১,০০০ কেজি; কিছুমাত্রায় সংক্ষিপ্ত পাল্লায় ১.৫ টন পর্যন্ত (রিপোর্টভিত্তিক)

সার্কুলার ত্রুটি (CEP): সরকারি সূত্রে প্রায় ৩০ মিটার; কিছু বিদেশি বিশ্লেষক প্রায় ২০ মিটারের কাছাকাছি উল্লেখ করেছেন

পাল্লা, ওয়ারহেড ও বৈচিত্র্য

রিপোর্টগুলোতে সিজ্জিলের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য হিসেবে ভারী ওয়ারহেড বহনক্ষমতা বারবার উল্লেখ আছে। দূরত্ব অনুযায়ী প্রায় ৭০০ কেজি থেকে ১.৫ টন পর্যন্ত পে-লোড বহনক্ষমতা এটিকে কঠোর সামরিক লক্ষ্য, ভূগর্ভস্থ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ধ্বংসের উপযোগী করে তোলে। রিপোর্টে বলা হয়েছে— সিজ্জিল এমআরভি–ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রাখে অর্থাৎ একটিবার উৎক্ষেপণে একাধিক স্বাধীন লক্ষ্যতেও পৃথক ওয়ারহেড পাঠানো সম্ভব।

এ ছাড়া, সিজ্জিলের নির্দেশন ব্যবস্থা ইনর্শিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম ও পর্যায়ক্রমে স্যাটেলাইট আপডেটের সমন্বয়ে গঠিত, যা সঠিকতা বাড়ায় এবং শত্রু প্রতিরক্ষাকে জটিল করে তোলে।

কৌশলগত প্রভাব

সিজ্জিলের এক বড় কৌশলগত সুবিধা হলো, এর পাল্লা ও মোতায়েনযোগ্যতা। রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের প্রায় যেকোন স্থান থেকেই এটি নিক্ষেপ করা যায়, কেবল পশ্চিমাঞ্চলেই নয়। ফলে শত্রু গোয়েন্দা ও নজরদারি কেন্দ্রগুলো যেখানে প্রত্যাশা করে না, সেখান থেকেই আঘাত যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়—এটি প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকে জটিল করে।

আরেকটি দিক, উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি-সময় কম হওয়ার কারণে প্রতিরক্ষামূলক সারপ্রাইজ বাড়ে। তরল-জ্বালানি ক্ষেপণাস্ত্র যেখানে ঘণ্টা-ঘণ্টা প্রস্তুতি চায়, কঠিন জ্বালানি সিস্টেম মিনিটের মধ্যে লঞ্চ-রেডি হয়। এই ‘রেডি-টাইম’ কৌশলগত সমতল বদলে দেয়। রিপোর্টগুলো আরও ইঙ্গিত করে যে, সিজ্জিল ইরানের প্রতিরক্ষা নীতির কেন্দ্রে যেখানে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও সীমাবদ্ধ সামরিক এন্ড-অফ-লাইনগুলোর মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণই হেফাজত ও ব্যালান্স বজায় রাখার মাধ্যম।

ইরানের ব্যালিস্টিক কর্মসূচির বিবর্তন

ইরানের প্রথম কঠিন জ্বালানিনির্ভর মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সিজ্জিল- ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। তখন দেশটি মূলত তরল জ্বালানিভিত্তিক শাহাব–৩ ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

কঠিন জ্বালানির সংমিশ্রণ ক্ষেপণাস্ত্রকে জ্বালানি ভরার আগেই প্রস্তুত ও সংরক্ষণযোগ্য করে তোলে, ফলে উৎক্ষেপণের সময় অনেক কমে যায়। বিপরীতে শাহাব–৩ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আগে কয়েক ঘণ্টা জ্বালানি ভরার প্রয়োজন হয়।

২০০৯ সালের শেষ নাগাদ সিজ্জিল–২ নামের উন্নত সংস্করণ প্রকাশিত হয়, যার দ্বিতীয় ধাপটি বিচ্ছিন্নযোগ্য এবং নিয়ন্ত্রণ ফিন যুক্ত, যা এর নির্ভুলতা বাড়ায়।

সিজ্জিল–২ এখনো পর্যন্ত ইরানের একমাত্র দুই–ধাপবিশিষ্ট কঠিন জ্বালানিনির্ভর ক্ষেপণাস্ত্র যা বৃহৎ পরিসরে দেশীয়ভাবে উৎপাদিত।

উড়ানের সময় প্রথম ধাপের জ্বালানি শেষ হলে একটি ছোট বিস্ফোরণের মাধ্যমে সেটি পৃথক হয়ে যায় এবং দ্বিতীয় ধাপের ইঞ্জিন জ্বলে ওঠে। এই প্রক্রিয়াটিই ১৮ জুন রাতে তেহরান আকাশে দেখা নাটকীয় আলোকদৃশ্যের কারণ।

প্রায় দুই দশক ধরে উৎপাদিত হওয়া সত্ত্বেও সিজ্জিল–২ আগে কখনো আইআরজিসি’র অভিযানে ব্যবহার করা হয়নি। প্রথমবার ব্যবহার হয় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।

আন্তঃমহাদেশীয় স্তরে উত্তরণের সম্ভাবনা

ইরানি গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টগুলোর একাংশে বলা হয়েছে, ইরান সিজ্জিলের তৃতীয় প্রজন্ম নির্মাণের দিকে কাজ করছে—একটি ত্রিস্তরীয় সংস্করণ যার পাল্লা ৪,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। যদি এই প্রযুক্তি কার্যকর হয়, তাহলে সিজ্জিল আঞ্চলিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে আন্তঃমহাদেশীয় স্তরে উত্তরণ ঘটাতে পারবে। এটি সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে নতুন বাস্তবতা তৈরি করবে। রিপোর্টগুলোতে ইঙ্গিত আছে যে, ইরান প্রয়োজনে প্ল্যাটফর্মগুলোর স্কেল ও ক্ষমতা বাড়াতে সচেষ্ট।

প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও মনমানসিকতা

সিজ্জিলের আবির্ভাব কেবল একটি প্রযুক্তিগত অর্জন নয়, এটি ইরানের প্রতিরোধ নীতির প্রতীক। যেখানে বিমানবাহিনী বা ওপেন সমুদ্রশক্তি সীমাবদ্ধ, সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র প্রমাণ করে কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। সিজ্জিলের দ্রুত মোতায়েন, দূর্দান্ত গতি, ভারী ওয়ারহেড এবং বিস্তৃত পাল্লা শত্রুর প্রতিরক্ষাকে জটিল করে তুলেছে। এটি ইসরায়েল বা অন্য যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্য ‘দুঃস্বপ্ন’ বললে অতিশয় বলা হবে না।

উৎক্ষেপণের সেই রাতের আলোকরেখা চিত্র ও শব্দ মিলিয়ে অন্তত একটাই বার্তা পাঠায়: ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এখন কেবল অস্ত্র নয়; তা হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব, প্রতিরক্ষা কৌশল এবং একটি জাতীয় আত্মপরিচয়ের প্রতীক।

Read more