যশোর প্রতিনিধি:
প্রতারণা মামলায় আটক যশোরের বহুল আলোচিত আদম কারবারি রবিউল ইসলামকে(৪৫)জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে আসামিপক্ষের আইনজীবী তার জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে,অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। যশোর সদর উপজেলার ঘোপ কচুয়া গ্রামের মোশারফ হোসেন ও তার শ্যালক হাফিজুর রহমান রাসেলের আত্মীয়-স্বজনদের মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নাম করে দফায় দফায় মোট ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় রবিউল ইসলাম।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, অর্থ নেওয়ার পর প্রথমদিকে বিশ্বাস অর্জনের জন্য দুই কিস্তিতে হাফিজুর রহমান রাসেলকে চার লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হলেও বাকি টাকা ফেরত না দিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করে অভিযুক্ত। একপর্যায়ে তিনি টাকা ফেরত দেবেন না এবং কাউকে বিদেশেও পাঠাবেন না এমন হুমকি দিতে থাকেন। এমনকি পাওনাদারের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানী শুরু করেন। এতে ভুক্তভোগীরা চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েন।
অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে হাফিজুর রহমান রাসেলের পক্ষে তার বোনজামাই মোশারফ হোসেন যশোর আদালতে রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের সিরাজসিংগা গ্রামে নিজ বাড়িতে অবস্থান না করে আত্মগোপনে চলে যান। তিনি যশোর শহরের বারান্দি মাঠপাড়ায় তার জামাতা আব্দুর রহমানের বাড়িতে দীর্ঘদিন লুকিয়ে ছিলেন। আব্দুর রহমান পেশায় একজন ইউনিয়ন পরিষদের কর্মচারী।
দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে কোতোয়ালি থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বারান্দি মাঠপাড়ার ওই বাড়ি থেকে রবিউল ইসলামকে আটক করে। আটককৃত রবিউল ইসলাম সদর উপজেলার সিরাজসিংগা গ্রামের নূরে আলম মোড়লের ছেলে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
আটকের পর তাকে কোতোয়ালি থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে বুধবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে রবিউল ইসলাম আটকের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে একে একে আরও ভুক্তভোগীরা থানায় ও আদালত চত্বরে এসে ভিড় জমান। তারা জানান, রবিউল ইসলাম একটি প্রতারক চক্রের মূল হোতা এবং তার প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। ভুক্তভোগীরা অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ ফারুক হোসেন জানিয়েছেন,রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে নতুন করে কেউ অভিযোগ করলে তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রতারণার সঙ্গে জড়িত অন্য কেউ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।