খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক

Share

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বিলম্বের কারণে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ দিনের যে কোনো সময় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। শারীরিক অবস্থাসহ চিকিৎসকদের অনুমতি মিললে আগামীকাল রোববার দিনের প্রথম ভাগে তাঁকে লন্ডনে নেওয়া হতে পারে।

এদিকে ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে লন্ডন থেকে দেশে ফেরেই শাশুড়ি খালেদা জিয়ার শয্যা পাশে যান পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। এদিন বিএনপি চেয়ারপারসনের রোগমুক্তি কামনায় সারাদেশে মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া প্রার্থনা করা হয়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। ২৭ নভেম্বর থেকে ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ অবস্থায় তিনি ওই হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলেও চিকিৎসকদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়ার এন্ডোস্কোপি করা হয়। পরে তাঁর আরেকটি মাইনর অপারেশন সম্পন্ন হয়। রাতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করবে। সেখানে তাঁকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে।

লন্ডনযাত্রা নির্ভর করবে শারীরিক অবস্থার ওপর
শুক্রবার সন্ধ্যায় মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. জিয়াউল হক বলেন, ‘তাঁর অবস্থা এখনও ক্রিটিক্যাল। ঝুঁকিমুক্ত নন। উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। সিসিইউতেই আছেন। আমরা মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করে শুক্রবার রাতে সিদ্ধান্ত নেব।’

কথা ছিল শুক্রবার সকালে কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে খালেদা জিয়া লন্ডনে যাবেন। তাঁকে ভর্তি করা হবে অত্যাধুনিক লন্ডন ব্রিজ হাসপাতালে। অ্যাম্বুলেন্সের কারিগরি জটিলতায় সেটি সম্ভব হয়নি। পরে বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা জানায় কাতার সরকার।

মেডিকেল বোর্ডের আরেকজন চিকিৎসক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বোর্ড দ্রুত বৈঠক করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়। এখনও খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা নির্ভর করছে বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসবে ঢাকায়। সিদ্ধান্ত হলে আজ অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছতে পারে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হলেও খালেদা জিয়াকে ১৩ ঘণ্টা বিমানে রেখে লন্ডনে নেওয়া সম্ভব হবে কিনা, তা পুরোপুরি নির্ভর করবে তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর। তিনি বলেন, সবচেয়ে ভালো লক্ষণ হলো–খালেদা জিয়ার চেস্ট (বুক) পরিষ্কার হচ্ছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় যেখানে কফ জমে ছিল।

এদিকে, গতকাল দুপুরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে। তাঁকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকেরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা আশা করছেন শনিবার কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছালে রোববার তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

উদ্বেগ কাটছে না
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা এখনও বেশ উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়ে গেছে। বিশেষ করে তাঁর হৃদযন্ত্র, লিভার, কিডনির জটিলতা কাটছে না। দেখা যাচ্ছে চিকিৎসায় এ সমস্যাগুলোর একটির সামান্য উন্নতি হলে অন্যটির অবনতি ঘটছে; যা কয়েক দিন ধরে নানা মাত্রায় উদ্বেগজনকভাবে ওঠানামা করছে। তবে চিকিৎসকেরা এখনও এই অর্থে আশাবাদী যে তারা খালেদা জিয়াকে যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, তিনি তা গ্রহণ করতে পারছেন। ওষুধ কাজ করছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, নতুন করে কিছু বলার মতো সিদ্ধান্ত হলে জানাবেন। তিনি মেডিকেল বোর্ডের দেশি-বিদেশি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সিসিইউতে নিবিড়ভাবে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আছেন।

খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তিনি। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডনের ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন। যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিৎসা শেষে গত ৬ মে দেশে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এদিকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন শাশুড়ি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে ঢাকায় আসেন বড় ছেলে তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান। গতকাল সকালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছে সেখান থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শয্যার পাশে অবস্থান করেন। তাঁর স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন।

পরে খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড ও ঢাকায় অবস্থান করা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করেন জোবাইদা রহমান। আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় তিনি এভারকেয়ারে অবস্থান করার পর সেখান থেকে ধানমন্ডির পৈতৃক বাসভবনে পৌঁছান। এর আগে তাঁকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি লন্ডন থেকে শুক্রবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটের দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান জোবাইদা রহমান। তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

জোবাইদা রহমান হাসপাতালের ইমার্জেন্সি লিফট দিয়ে খালেদা জিয়া যেখানে চিকিৎসাধীন, সেখানে যান। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাবে আজ
গতকাল সকালের মধ্যে কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। কারিগরি ত্রুটির কারণে ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় পৌঁছায়নি। কাতারের আমিরের দেওয়া অন্য আরেকটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ দিনের যে কোনো সময় ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

শুক্রবার সকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বরাতে দলটির মিডিয়া সেলের ফেজবুক পেজে জানানো হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুক্রবার আসছে না। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে এটি শনিবার পৌঁছাতে পারে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, কাতার রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে কারিগরি ত্রুটি থাকায় দেশটির আমির তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন, যা শনিবার বিকেল ৫টায় ঢাকায় অবতরণ করবে। এখন যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আসছে, সেটিও কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, কিন্তু জার্মান কোম্পানির তৈরি। কাতার জার্মানি থেকে কোনো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে না।

সুস্থতা কামনায় সারাদেশে মসজিদে মসজিদে দোয়া
খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় শুক্রবার সারাদেশে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে দোয়া ও প্রার্থনা করেছেন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা। এর আগে বৃহস্পতিবার দোয়া ও প্রার্থনা আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার দেশের সব মসজিদে বাদ জুমা বিশেষ দোয়া এবং সব মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন মসজিদে দোয়া প্রার্থনায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তারা খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন।

হাসপাতালের সামনে সাধারণ মানুষের ভিড়
বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার আপডেট জানতে প্রতিদিনই হাসপাতালসংলগ্ন এলাকায় ভিড় করছেন দলটির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতালের সামনে অবস্থান করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ সেখানেই দোয়া ও প্রার্থনা করছেন।

Read more