যশোর প্রতিনিধি
যশোর জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন খাত থেকে আয়ের একটি বড় অংকের টাকা হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। রোগীদের কাছ থেকে সেবার বিনিময়ে যেসব খাত থেকে অর্থ নেয়া হয়, সে সকল বিভাগের মূল দ্বায়িত্বে থাকা কর্মচারী মো. ইসরাফিল ও মো. মুস্তাকুল সহ কয়েকজনের একটি চক্রের যোগসাজসে চলছে এ লুটপাট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মাসে অর্ধ কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে ওই চক্রটি।
যদিও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হুসাইন সাফায়েত ও আরএমও ডা. বজলুর রশিদ টুলু বলছেন , এখানে অনিয়ম ও দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও বজলুর রশিদ টুলু বলেন, বৃহত্তর যশোরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেন। এই অঞ্চলের মধ্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান খুবই ভালো, সে কারণে বৃহত্তর যশোরের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক রোগী আসে। সেই রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের মতো।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ইনচার্জ চাহিদা খাতুন বলেন, প্রতিদিনই তিন শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নেন তাও শতখানেকের কাছাকাছি। হাসপাতালে রোগীর ভর্তি ফি ২০ টাকা। এবং প্রাথমিক চিকিৎসা ফি জরুরী বিভাগে ১০ টাকা।
আউটডোরে ডাক্তার রোগী দেখেন ১০ টাকার টিকিটে।
বৃহস্পতিবার ব(৯অক্টোবর ) সকালে অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাক্তার জহুরুল ইসলাম বলেন,, প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে ২ শতাধিক শতাধিক রোগী দেখা হয় তার বিভাগে। এসব রোগীর ১০০ ভাগ রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়া দরকার। তবে গরীব অসহায় হলে পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে দিই।
সার্জারী বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসক ডাক্তার আব্দুর রহিম মোড়ল বলেন , প্রতিদিন গড়ে দেড় শতাধিক রোগী দেখেন তিনি। এর মধ্যে ৭০ ভাগ রোগীকেই রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেন এবং তা হাসপাতাল থেকে করাতে বলেন। রিপোর্ট পাওয়ার পরই চিকিৎসাপত্র দেয়া হয়।
মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক মধুসূদন পাল জানান, প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী দেখেন আউটডোরে । এর ভেতরে ৬০ শতাংশ রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা দেয়া হয়।
গাইনি বিভাগে ডিউটিতে থাকা কনসালট্যান ইলা মন্ডল জানান, গাইনি রোগীর ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো লাগে। কোনো কোনো দিন দুই শতাধীক রোগী দেখা হয় আউটডোরে ।
এদিকে, জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডাক্তার বিচিত্র মল্লিক জানান, প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক রোগী বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। ওই সমস্ত রোগীর ৬০ শতাংশকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্ব।
আগত রোগীদের রোগের ক্ষেত্রে যে সমস্থ পরীক্ষা গুলো অধিকাংশ সময় করানো লাগে এসব পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে সিবিসি/পিবিএফ, এস.ক্রিয়েটিনাইন, ইএসআর/আরবিএস/২এইচএবিএফ, এসজিপিটি/এএলটি, এসজিওটি/এএসটি, এস.বিলিরুবিন, লিপিড প্রোফাইল, এস.ইউআরইএ, এস.ইউরিক এসিড, ইউরিন আর/এম/ই, এস.ইলেকট্রোলাইট, ইউডাল/এফ.এনটিজেন, এএসও টাইটার/ আরএ/ সিআরপি, এইচবিএসএজি/আরএ/ সিআরপি, এইচবিএসএজি/ এইচআইভি/ এইচসিভি।
এছাড়া ইসিজি, আল্ট্রাসনো, সিটিস্ক্যান, এক্স-রে পরীক্ষা করা হয় হাসপাতালটিতে। এসব পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ফি নেয়া হয়। তবে এই পরীক্ষাগুলো জেনারেল হাসপাতালে করলে যে অর্থ লাগে বাইরের যে কোনো ক্লিনিকে করলে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ ব্যয় হয়। সে ক্ষেত্রে সদর হাসপাতালে রিপোর্ট করতে আগ্রহ বেশি বলে জানান আরএমও ডাক্তার আব্দুস সামাদ।
সূত্রমতে, প্রতিদিন বহির্বিভাগে আড়াই হাজার রোগী চিকিৎসার জন্য টিকিট নেন ১০ টাকা করে তাহলে প্রতিদিন ওইখানে আসে ২৫ হাজার টাকা। প্রতি শুক্রবার আউট ডোর বন্ধ থাকে অর্থাৎ ২৬ দিনে ওই খাত থেকে আসে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। হাসপাতালে পুরুষ-মহিলা মিলে পেইং বেড মোট ৫২টি। প্রতিদিন দুইশ করে হলে হয় ১০ হাজার ৪০০ টাকা। ২৬ দিনে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সব বাদ দিয়ে সর্বনিম্ন যদি এক হাজার রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয় সকলের থেকে ৫০০ টাকা করে নেয়া হয় তাহলে প্রতিদিন পাঁচ লাখ টাকা জমা হয়। যা ২৬ দিনে এসে দাড়ায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা।
হাসপাতালে আর এম ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার বজলুর রশিদ টুলু জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে জরুরী বিভাগ থেকে আয় হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার ৯৬৫টাকা, ইসির থেকে এসেছে ৮৮০ টাকা,এভাবে আউটডোর ক্যাশ কাউন্টার, প্যাথলজিসহ বিভিন্ন সেক্টর থেকে আই হয়েছে ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৮৬০ টাকা
আর সব মিলে প্রতি মাসে হাসপাতালের বিভিন্ন খাত থেকে আয় এক কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার। সেই হিসেবে মাসে এক কোটি ১৭ লাখ টাকার কোনো হদিস নেই।
উল্লেখ্য, হাসপাতালে যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয় তার কোনো কোনো টা সিটিস্ক্যানের ক্ষেত্রে সর্বনিন্ম ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
প্রতি মাসে যশোর জেনারেল হাসপাতালের কোটি টাকার কোনো হিসাব নেই।
বক্তব্য নেয়ার জন্য ইসরাফিল এবং মোহাম্মদ মোস্তাকুলে বক্তব্য জানতে চাইলে দুই জনই বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটি আরএমও ডাক্তার বজলুর রশিদ টুলু বলেন , আমার কিছু বলার নেই।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হুসাইন শাফায়েত বলেন , হাসপাতালে অনিয়ম ও দুর্নীতির কোনো সুযোগ নাই। বছরে এক-দুইবার অডিট হয়। কয়দিন আগেও ঢাকা থেকে এসে অডিট করে গেছেন। এরপরও কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি কিভাবে হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখা হবে।