ঠাকুরগাঁও জেলার সার্কিট হাউজে মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে অনুষ্ঠিত এ সভায় গুরুতর এক অভিযোগ আসে তার কানে। এরপর মিটিং শেষ করে বেরিয়েই সার্কিট হাউজে দাঁড় করানো একটি গাড়িতে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দেন তিনি।
গাড়িটি তল্লাশি করে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ, যেগুলোর অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। গাড়িটি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তারের বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়।
ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে; গঠিত হয়েছে তিন সদস্যের কমিটি।
জানা গেছে, উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নিতে আসা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মৌসুমী আক্তারকে বহনকারী সরকারি গাড়িটি সার্কিট হাউজেই রাখা ছিল। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত খামারিদের অভিযোগের ভিত্তিতে গাড়িটির পেছনের অংশে তল্লাশি চালানো হয়। গাড়ির ট্রাঙ্ক খুলে পাওয়া যায় সরকারের সরবরাহকৃত বিপুল পরিমাণ ওষুধের মজুত, যেগুলোর বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ।
জব্দকৃত এসব ওষুধ মূলত প্রান্তিক খামারিদের জন্য বরাদ্দ ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে তা খামারিদের মাঝে বিতরণ না হয়ে দীর্ঘদিন গাড়িতেই পড়ে ছিল। ফলে মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এবং ওষুধগুলো অকেজো হয়ে পড়ে।
ঘটনার পর গাড়ির চালক মো. জয়নাল আবেদীনকে আটক করে পুলিশ। তবে খামারিরা দাবি করছেন, চালক কোনোভাবেই এই ঘটনার মূল দায়ভার নিতে পারেন না। তিনি কেবল নির্দেশনা পালন করেছেন। প্রকৃত দায়ী ব্যক্তি হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
এদিকে এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, সরকার যে ওষুধ প্রান্তিক খামারিদের কল্যাণে সরবরাহ করে, তা এভাবে নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। এ ঘটনায় জড়িত কেউ রেহাই পাবে না।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকারি সম্পদের এমন অপব্যবহার শুধু দায়িত্বহীনতা নয়, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম ফেরদৌস ওষুধগুলো জব্দ করেন। অভিযুক্ত কর্মকর্তার জেলা ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং নির্দেশ দেওয়া হয়, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের বাইরে যেতে পারবেন না।
ঘটনার পরপরই প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জবাইদুল কবিরকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এই কমিটি।
সভায় অংশ নেওয়া খামারিরা অভিযোগ করেন, সরকারি ওষুধ তাদের সবাইকে দেওয়া হয় না। বরং কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির যোগসাজশ রয়েছে। সরকারি ওষুধ বিতরণ করলে বেসরকারি কোম্পানির বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক সময় এই ওষুধ ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হয়। ফলে তারা ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হন।
তাদের অভিযোগ, শুধু সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তা নয়, জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাও এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। কারণ জেলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতসারেই এমন অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলছিল।
জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তদন্তে সত্যতা মিললে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।