যশোরের বাঘারপাড়ার ধলগ্রাম বাজার: দেড়শ বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী

Share

যশোর অফিস 
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নে চিত্রা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী ধলগ্রাম বাজার। প্রায় দেড়শ বছরের অধিক সময় ধরে চলমান এই হাট এখনো সমানভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হয়ে আছে। স্থানীয়দের কাছে এটি শুধু একটি বাজার নয়, বরং ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক।
নদীর ঘাটঘেঁষা প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ বাজারে প্রতি সপ্তাহে শনি ও বুধবার হাট বসে। অন্যদিনগুলোতেও নিয়মিত বাজার চলে। হাটের দিন আশপাশের ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলা শহর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা ভিড় জমান।
পুরোনো দিনগুলো স্মরণ করে স্থানীয় কৃষক শহিদুল ইসলাম (৭২) বলেন, পাকিস্তান আমলে তিনি বাবার সঙ্গে বাঁশের ডালা কাঁধে করে হাটে আসতেন। ধান বিক্রি করে বাজার-সদাই করা হতো, আর তাকে কিনে দেওয়া হতো রসগোল্লা বা জিলাপি। দশপাখিয়া গ্রামের মোসলেম মুন্সীও ছোটবেলা থেকে হাটে আসছেন। তিনি বলেন, একসময় ধলগ্রাম ঘাটে শত শত নৌকা বাঁধা থাকত। বাইরের জেলা থেকেও কারবারিরা আসতেন পাট, ধান ও গুড় কিনতে।
প্রায় ৫০ বছর ধরে বাজারে ব্যবসা করছেন চম্পক কুন্ডু। তিনি জানান, সপ্তাহের হাটে গরম মসলা, সরিষার তেলসহ নানা নিত্যপণ্য বিক্রি করেন। ঘানিভাঙা সরিষার তেলই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। একইভাবে বল্লারমুখ গ্রামের বাসুদেব কুমার দে পৈতৃক দোকানে তামাক, জর্দা ও মসলা বিক্রি করে আসছেন প্রায় অর্ধশত বছর ধরে।
ধলগ্রাম বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান সরদার জানান, পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শোনা মতে হাটের বয়স দেড় থেকে দুইশ বছর। একসময় পাট ও ধান কেনাবেচার জন্য বিখ্যাত ছিল এ বাজার। বর্তমানে এখানে প্রায় সাড়ে তিনশ স্থায়ী দোকান রয়েছে। মৌসুমে প্রতিটি হাটের পরদিন ১০-১২ ট্রাক পাট এবং ৮-১০ ট্রাক ধান লোড হয়ে থাকে।
ধলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এ বাজার স্থানীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীর ঘাট সংস্কার ও বাজারের উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী ধলগ্রাম বাজার আজও স্থানীয় জনগণের জীবন-জীবিকার অংশ হয়ে টিকে আছে, যেখানে মিশে আছে গ্রামীণ স্মৃতি, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতা।

Read more