নদীর পেটে যাচ্ছে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’, বাসিন্দাদের মাথায় হাত

Share

নদী ভাঙনের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প। গৃহহীনদের নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখাতে নির্মিত ঘরবাড়ি এখন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায়। তীব্র ভাঙনে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছেন প্রকল্পের বাসিন্দারা। নেই স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা কিংবা কর্মসংস্থানের সুযোগ। ফলে ঘর পেলেও পাচ্ছেন না বসবাসের উপযোগী পরিবেশ। চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন ৭১টি পরিবার। তাদের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে নদীর ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে। আশ্রয়ের বদলে এ প্রকল্প যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

সমুদ্রের সঙ্গে লড়াই করে জেলেরা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখলেও অনেকেরই বসবাসের জায়গা নেই। নেই এক খণ্ড জমি, নেই মৃত্যুর পর দাফনেরও স্থান। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস মাথায় নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা এসব মানুষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে এসে নতুন দুর্ভোগে পড়েছেন।

নুর ইসলাম নামের এক জেলে বলেন, আমরা সবাই এখানে জেলে পরিবার। প্রতিটি ঘরের টিন ক্ষয়ে গেছে, দরজা-জানালা নেই। ঘরের ভেতরে বসেই আকাশ দেখা যায়। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি ঢোকে। পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে কোনোমতে টিকে আছি। এই ঘরে মানুষের থাকা সম্ভব নয়, তবুও থাকতে বাধ্য হচ্ছি।

প্রকল্পের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা

২০০৫ সালে খাপড়াভাঙ্গা নদীর কোলঘেঁষে ৮০ পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়। উদ্দেশ্য ছিল—জেলেদের জন্য নিরাপদ বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু বসবাসের দুই বছরের মাথায় ভয়াল সিডরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রকল্পটি। এরপর দীর্ঘদিনেও মেরামত হয়নি।

এ দিকে খাপড়াভাঙ্গা নদীতে দ্রুতগতির ট্রলার চলাচলের কারণে ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। এতে প্রায় তিন শতাধিক বাসিন্দা যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও ভাঙনরোধে দাবি জানালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জালাল হাওলাদার (৫৫) অভিযোগ করে বলেন, এই প্রকল্পটি বিএনপি সরকারের সময়ে গড়ে তোলা হয়েছিল। তাই পরের সরকার ঘরগুলো মেরামত করেনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরের টিনে মরিচা ধরে গেছে, বেড়া ভেঙে পড়েছে। অনেক পরিবার পলিথিন দিয়ে ঘর ঢেকে কোনোমতে দিনযাপন করছে। নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা কিংবা শিশু শিক্ষালয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে অন্তত ৯টি পরিবার প্রকল্প ছেড়ে চলে গেছে।

বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, অন্য কোথাও জায়গা নেই বলেই এখানে আছি। না হলে আমরাও চলে যেতাম।

 

স্থানীয়দের দাবি

জেলেদের অভিযোগ, ট্রলারগুলো দ্রুতগতিতে চলাচল করে ঢেউ তুলছে, এতে ভাঙন আরও বাড়ছে।

কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি ও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন মাঝি বলেন, স্থানীয় ট্রলারগুলো আস্তে চলে, কিন্তু দূরের ট্রলারগুলো দ্রুত চলায় ভাঙন কমছে না।

লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, দুএকদিনের মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইয়াসীন সাদেক বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামতের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Read more