নগদ টাকা না পেয়ে ১১টি চেকে ৫ কোটি টাকা লিখে নিয়ে যায় রিয়াদ

Share

ঢাকা অফিস: মাস খানেক আগে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুল কালাম আজাদের অফিসে গিয়ে মব তৈরির হুমকি দিয়ে তার গলায় জুতার মালা পরানোর ভয় দেখিয়ে পাঁচ কোটি টাকার চেক ও একটি জমির দলিল নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আরও এক এমপির কাছ থেকে চাঁদা নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

নবম জাতীয় সংসদের রংপুর-৬ আসনের এমপি ছিলেন আব্দুল কালাম আজাদ। রাজধানীর গ্রিন রোডে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ‘মব’ সৃষ্টি করে নগদ টাকা না পেয়ে ১১টি চেকে ৫ কোটি টাকা লিখে নিয়ে যায়।

সাবেক সংসদ সদস্যের শ্যালক সাইফুল ইসলাম ও ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

সাইফুল ইসলাম জানান, গত ২৬ জুন বিকেল ৫টার দিকে গ্রিন রোডে সাবেক সংসদ সদস্যের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সমন্বয়ক পরিচয়ে রিয়াদের নেতৃত্বে ৬ জন প্রবেশ করে। সে সময় অফিসে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল কালাম আজাদ। অফিসে এসেই তারা এমপির ফোন কেড়ে নেয়। পরে আওয়ামী লীগের দোসর বলে বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে। অফিসের নিচে ২০০ লোক আছে। এসব বলে হুমকি দিয়ে তারা মব তৈরি করে। এ সময় তারা তার কাছে টাকা দাবি করে। কিন্তু নগদ টাকা না থাকায় জোর করে ড্রয়ার থেকে চেক বই বের করে। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক বইয়ের ১১টি পাতায় ৫ কোটি টাকা লিখিয়ে নিয়ে চলে যায়। এসময় তার ফোনটা দিয়ে যায়।

ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় চেকের টাকা ক্যাশ করতে পারেননি। দ্রুতই এ ঘটনায় মামলা করবেন বলে আর কিছু বলতে চাননি সাইফুল ইসলাম।

এর মধ্যে রিয়াদের বাসা থেকে ৪টি চেক উদ্ধার করেছে গুলশান থানা-পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, রিয়াদের বাসা থেকে প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। কারো দলীয় পরিচয় মূখ্য বিষয় না। সম্ভাব্য কারণ ও আর কেউ জড়িত আছে কি না সেটা তদন্ত শেষে জানা যাবে।

চেক উদ্ধারের ঘটনায় মামলার বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের নিউমার্কেট (নিউমার্কেট-কলাবাগান) জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জোর করে চেক নেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগী সাবেক সংসদ সদস্যের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এদিকে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু সাবেক এমপির বাসাতেই নয়, গুলশান, বনানী, বাড্ডা এলাকায় অনেকের কাছ থেকেই তারা চাঁদা দাবি করেছে। তাদের ৮ থেকে ১০ জনের একটি গ্রুপ বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে। অনেকে মৌখিকভাবে অভিযোগও করেছে। সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শুলশান থানায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেসুর রহমান বলেন, মামলার তদন্ত চলেছে। সেসব তথ্য পাচ্ছি সেগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত ২৬ জুলাই সন্ধ্যার পর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডের ওই বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার পর আরও ৪০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন পাঁচজন।

তারা হলেন-মো. সাকাদাউন সিয়াম (২২), নাটোরের লালপুরের বাসিন্দা সাদমান সাদাব (২১), মো. আমিনুল ইসলাম (১৩), ইব্রাহীম হোসেন (২৪) এবং আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ (২৫)।

তাদের মধ্যে রিয়াদ নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা এবং ধানমন্ডির নিউ মডেল এলাকায় বসবাস করেন। এছাড়া ইব্রাহীমের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের রামদাসদী গ্রামে এবং আমিনুল বাড্ডা আলাতুন্নেছো স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব সদস্য। পরে রাতেই চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তিনজনকে বহিষ্কার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় চারজনকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

Read more