নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি ৮২ বছর বয়সে লন্ডনের একটি ক্লিনিকে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে সামরিক শাসক এবং পরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।
তিনবারের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর ২০১৫ সালে ইতিহাস গড়ে ক্ষমতায় আসেন এবং ২০১৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হন।
ব্যক্তিগত সততার জন্য পরিচিত বুহারি কখনোই প্রচলিত রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তাকে বরং কঠোর, নির্লিপ্ত এবং ধীর-গতির নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তার জনপ্রিয়তার মূলভিত্তি ছিল উত্তর নাইজেরিয়ার দরিদ্র জনগণ—‘তালাকাওয়া’ নামে পরিচিত এই শ্রেণি বরাবরই তার প্রতি আস্থাশীল ছিল।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় তিনি দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, স্বজনপ্রীতি ও বেকারত্ব দূর করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তার শাসনামলে তেলের দাম পড়ে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক সংকট দেশকে বড় ধাক্কা দেয়। বোকো হারাম নির্মূলের প্রতিশ্রুতি থাকলেও সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি; বরং জঙ্গিদের একটি অংশ ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
তার সময়ে চাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, যাতে স্থানীয় কৃষি উৎপাদন বাড়ে—কিন্তু পর্যাপ্ত উৎপাদন না হওয়ায় চালের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করে। এমনকি তার স্ত্রী আয়েশা বুহারিও প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন এবং পুনর্নির্বাচনে সমর্থন না দেওয়ার হুমকি দেন।
১৯৮৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন বুহারি। ‘শৃঙ্খলা ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান’ চালিয়ে প্রায় ৫০০ রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেন। তার কড়া নীতিমালা যেমন প্রশংসিত হয়েছিল, তেমনই সমালোচিতও হয়েছিল—বিশ্ববিখ্যাত সংগীতশিল্পী ফেলা কুতি পর্যন্ত তার আমলে কারাবন্দি হন।
২০১৫ সালে সরকার গঠনে ছয় মাস সময় নেওয়ায় তাকে ‘বাবা গো স্লো’ নামে ডাকা হতো। একবার তিনি বলেছিলেন, “বাবা ধীর নয়, সিস্টেমটাই ধীর। ” ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে পুরনো নোট বাতিল করে ‘নাইরা পরিবর্তন নীতি’ চালু করে তিনি নতুন বিতর্কের জন্ম দেন। এ কারণে দরিদ্র জনগণের মাঝে নগদ টাকার সংকট দেখা দেয়, যা আদালতের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালেই বুহারির শারীরিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তিনি নিয়মিত বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতেন। কিন্তু তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কখনো জনগণকে খোলাখুলি কিছু জানানো হয়নি।
মুহাম্মাদু বুহারি দুইবার বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী সাফিনাতু ইউসুফের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা হালিলুর সঙ্গে সংসার করেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তিনি রেখে গেছেন ১০ সন্তান।