এনসিপি নির্বাচন চায়,কিন্তু সেটা সংস্কার ও বিচারের পর। আগে রাষ্ট্র সংস্কার তারপর নির্বাচন। কেবলমাত্র ক্ষমতার পালাবদলের জন্যই জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়নি।
বিগত ফ্যাসিবাদের বিদায় করে কোন চাঁদাবাজ, দূর্ণতিবাজ ও ক্ষমালিপ্সুদেরকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসানোর জন্য এদশের হাজার হাজার ছাত্র-জনতা বন্দুকের নলের সামনে জীবন বিসর্জ দেয়নি। পতিত স্বৈরাচার রাষ্ট্রের প্রতিটি অর্গানকে ধ্বংস করে গেছে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা সেই পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগকে ক্ষমতা থেকে নামাতে পেরেছি। কিন্তু এখনো রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি আলোচনার টেবিলে।
প্রয়োজনে আমরা আবারও দেশের নিপীড়িত, নির্যাতিত, বঞ্চিত মানুষকে সাথে নিয়ে রাজপথে নামবো। কিন্তু সংস্কার ও বিচারের আগে এই দেশে যেন তেন ভাবে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না। গতকাল বিকেলে যশোর ঈদগাহ মোড়ের খেজুর চত্বরে অনুষ্ঠিত পদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন। প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামার হুশিয়ারি প্রদান করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীর আন্দোলন দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে। যারা ইতিমধ্যে দেশকে চাদাবাজির ক্ষেত্রে পরিণত করেছে এবার লড়াইটা হবে তাদের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি যারাই করবে এমসিপি তাদের ছাড় দেবে না। যদি এনসিপির নেতাকর্মীরাও দুর্ণীতির সাথে যুক্ত হয় দল তাদের বিরুদ্ধেও মাঠি নামবে। আমাদের আগামীর আন্দোলন দুর্নীতি ও চাঁদাাজির বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে নতুন বন্তোবস্ত নিয়ে এনসিপি জনগণের কাছে যাচ্ছে। দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত এনসিপির প্রতিটি নেতাকর্মী সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে যে, এনসিপি নির্বাচন চায়। কিন্তু তার আগে সংস্কার ও বিচার কাজ শেষ করতে হবে। যারা গত ১৫ বছরে এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করে কেবল মাত্র নিজেদের আখের গুছিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, যারা নিরীহ ছাত্রজনতাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোশকতায় নির্বিচারে গুলি করে হত্যা কেেরছ, যারা দেশে খুন গুম ও অপহরণের রাজনীতিকে ভৈধতা দিয়ে দেশকে নরকে পরিণত করেছিলো তাদের বিচার না করা পর্যন্ত এই দেশে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
পলাতক সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে গেছে। সেই ধ্বংষাবশেষ এর উপর দাড়িয়ে দেশে কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের বক্তব্য পরিস্কার। আগে রাষ্ট্র যন্ত্র মেরামত ও সংস্কার করে খুনিদের বিচার করতে হবে- তারপরে নির্বাচন। আর যারা এসব না করে কেবরমাত্র নির্বাচনের কথা বলছে তারা দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্ভভৌমত্বের সাথে ও জুলাই বিপ্লবে হাজার হাজার শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী করছে। প্রয়োজনে এনসিপি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার ব্যানারে আবারও রাজপথে নামবো তবুও ক্ষমতা বদলের নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। এনসিপির দক্ষিানাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সাকিব শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা আক্তার হোসেন, নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী পাটোয়ারি,হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম,সামান্তা শারমিন, নুসরাত তাবাসসুম,ডা. তাসনিম জারাসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা” কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই পদযাত্রার মাধ্যমে শহীদদের কবর থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের উঠান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান। পথসভা থেকে জানানো হয়, এই পদযাত্রার মূল লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে জানা, তারা কেমন বাংলাদেশ চায়; নতুন ধারার রাজনীতি নিয়ে তাদের ভাবনা কী; এবং তরুণ রাজনীতিকদের প্রতি তাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা কী।
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার বক্তৃৃতায় বলেন, এই যশোরের মাটি বিপ্লবীদের ঘাটি। এই মাটিতে কমরেড আব্দুল হক, কমরেড আব্দুল মতিন, কমরেড মনি পীর, কমরেড অমল সেনসহ হাজারো বিপ্লবীর জন্ম হয়েছে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে এই যশোরের মানুষের রয়েছে গৌরব উজ্জল ইতিহাস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যশোরের মানুষের সশস্ত্র সংগ্রামের কথা ইতিহাসের পাতায় জ¦ল জ¦ল করছে। বীর শ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ শেখ এই মাটির সন্তান। এই মাটিতেই তিনি শহীদ হয়েছিলেন। মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে এই যশোর থেকে বিজয় সূচিত হয়েছিল।
যশোর প্রথম শত্রুমুক্ত জেল। ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও যশোরের নেতাদের ছিলো গৌবর উজ্জ্বল ভূমিকা। ২০২৪ সালের ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের পতন ও বিদায় ঘন্টা বাজানোর আন্দোলনেও যশোরে বীর ছাত্র জনতার অংশ গ্রহণ ছিলো উল্লেখ করার মতো। সেই যশোর থেকে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম তা বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ করলাম।
প্রয়োজনে আবারও দেশে ছাত্র জনতাকে সাথে নিয়ে চাঁদাবাজমুক্ত, দূর্নীতি ্র স্বজনপ্রীতিমুক্ত, কোটা মুক্ত, আওয়ামী ফ্যাসিষ্টমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে রাজপথে জীবন বিসর্জন দেবো। তবু কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করবো না। এই দেশে কোন চাঁদাবাজ, দূনীতিবাজ, অর্থ লুন্ঠনকারী ও বৈষম্যসৃষ্টিকারীদের ঠাঁই হবে না। রাষ্ট্র মেরামত ও ফ্যাসিবাদীদের বিচার ছাড়া কোন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। কোন নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। জুলাই যোদ্ধাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ছাড়া এই দেশে কোন ক্ষমতার পালাবদল ঘটতে দেওয়া হবে না।বক্তারা অবিলম্বে ফ্যাসিষ্ট পলাতক খুনি শেখ হাসনিাসহ জুলাই গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে যশোর থেকে শুরু হয় জুলাই পদযাত্রা। পদযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে খুলনার পথে যাত্রা করে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১ টায় যশোরের একটি অভিযাত হোটেলে জুলাই আন্দোলনে যশোরাঞ্চলে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মতবিনিময় করেন। এই মতবিনিময় সভায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা ও আহত জুলাই যোদ্ধারা জাতীয় নির্বাচনের আগেই ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা ও বাস্তবায়নের দাবি জানান।
শুক্রবার (১১ জুলাই) পদযাত্রার ১১তম দিনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যশোর শহরের হোটেল ওরিয়নে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া আহতরা অভিযোগ করেন, জুলাই আন্দোলনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ঘোষণা পত্র, আহতদের স্বীকৃতি ও ‘জুলাই সনদ’ প্রদান, পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তারা বলেন, নতুন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখালেও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ধীরে ধীরে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। এতে তারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগেই ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা ও তা বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান আহতরা।
এ সময় এনসিপি নেতারা তাদের বক্তব্যে আহতদের দাবির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দেন তারা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম,মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুসরাত তাবাসসুম ও ডা. তাসনিম জারা, এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা।