আর ক’দিন পরেই ঈদুল আজহা। বৃষ্টি না আবার পণ্ড করে দেয় সেই আনন্দ।
এমন ভাবনায় অনেকেরই কপালে চিন্তার ভাঁজ। পশুর হাটের ব্যবস্থাপনাই বা কেমন হবে, ঈদের জামাত, কোরবানির সময় প্রকৃতি ছাড় দেবে তো?
গত দু’দিন ধরেই গভীর নিম্নচাপের দাপট দেখলো দেশবাসী। তার ওপর মৌসুমি বায়ু তথা বর্ষাও এবার এসেছে আগেভাগেই। ফলে বর্ষণ ঠিক অসময়ের না হলেও মে’র শেষের এই আবহাওয়া ঈদের প্রস্তুতিতে বাঁধ সেধেছে। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন এতোটা চিন্তার কিছু নেই।
ঈদের আগে-পরে কেমন থাকবে আবহাওয়া:
আগামী ৭ জুন ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। এর আগের চারদিন ও পরের তিন কেমন থাকবে প্রকৃতির রূপ, তা জানালেন আবহাওয়াবিদ ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।
তিনি বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু তথা বর্ষা মাঝারি আকারে দেশের ওপর সক্রিয়। তার মানে সাগর থেকে অনবরত মেঘ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। আর এগুলো চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে যাচ্ছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এটাকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় শৈলৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত। নিম্নচাপ চলে গেছে। এখন এই কারণে বৃষ্টি হচ্ছে।
বর্ষার মেঘটা খণ্ড খণ্ড মেঘ, আকাশে দিকে তাকালে অনেকটা সারি সারি মেঘ যাচ্ছে এমন দেখা যায়। একটা মেঘ যায়, আরেকটা মেঘ আসে। এ সময় মেঘ থাকে নিচের দিকে। একদম দেখা যায়। মেঘ নাই, হঠাৎ সূর্য ওঠে, আবার মেঘ চলে আসে। ওই মেঘটাই বৃষ্টি নিয়ে আসে। এবার মৌসুমি বায়ু কিছুটা আগে ভাগেই চলে এসেছে। যে কারণে এই সময়ে একটু বেশি বৃষ্টি হচ্ছে।
ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, সোমবার থেকেই বৃষ্টিপাত কমে যাবে। ৩ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি বা একটানা বৃষ্টির আশঙ্কা কম। এই সময়ে হবে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। এক পশলা, দুই পশলা, এই রকম। কখনো কখনো স্বল্প সময়ের জন্য হবে। চলবে রোদ বৃষ্টির খেলাও। প্রতিদিনই এমন হবে, তবে তীব্রতা থাকবে না।
ভ্যাপসা গরম বাড়বে:
বৃষ্টির পর রোদ ওঠলে গরম বেশি অনুভূত হয়, এটা সবার জানা। তবে এর পেছনেও আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। ঈদের সময়টাতে রোদ বৃষ্টির খেলার জন্য গরম অনুভূতিও বাড়বে বলে জানালেন আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক।
তিনি বলেন, ৩ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকবে ৩৪ ডিগ্রির আশপাশে। বর্ষায় মেঘ খুব কাছে চলে আসার কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে বৃষ্টির পর রোদ ওঠলে শরীর থেকে যে ঘাম বের হয়, তা আবার বাতাস শুষে নিতে পারে না। কারণ বাতাস আগে থেকেই ভেজা থাকে। ফলে শরীরের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা ত্বকের ওপরে জমে থাকা ঘামের কারণে বেরোতে পারে না। তাই ভ্যাপসা গরম অনুভূত হয়। এই সময় আবহাওয়া তপ্ত হয়ে ওঠবে না।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, রোববার থেকেই বৃষ্টিপাত কমতে শুরু করবে। এরপরও সব বিভাগে বৃষ্টি হবে। তবে সেটা দু’এক জায়গায়। কোথাও কোথাও বজ্রসহ বৃষ্টি হবে। এ সময় বাড়বে তাপমাত্রাও।
বন্যার ঝুঁকি কতটুকু:
দেশের বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ ভারত থেকে নেমে আসা পানি। গত কয়েকদিন ধরেই দেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় অঙ্গরাজ্য আসাম, মেঘালয়, সিকিমের অতি তীব্র বর্ষণ হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বানের আশঙ্কা বেড়ে গেছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও অতিভারী বৃষ্টি কারণে ইতোমধ্যে সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডও (পাউবো) বন্যার ঝুঁকিকে উড়িয়ে দিচ্ছে না। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, সিলেট বিভাগবাসীকে একটু সচেতনতার সঙ্গেই দিন পার করতে হবে।
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, ধলাই, সোমেশ্বরী ও মনু নদীসমূহের পানির সমতল আগামী দু’দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এই সময়ে নদীসমূহের পানির সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও মৌলভীবাজার জেলায় উক্ত নদীসমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীসমূহের পানি সমতল আগামী পাঁচদিন বাড়তে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে সিলেট অঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানির সমতল বাড়ছে, যা আগামী দু’দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে; পরবর্তী একদিন হ্রাস পেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
আবার রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানির সমতল আগামী তিনদিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তিস্তা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
এছাড়া রোববার (০১ জুন) চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরি, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ইত্যাদি নদীগুলের পানির সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দু’দিন হ্রাস পেতে পারে।