নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: নিজের নিরাপত্তা চেয়ে এবার ভয়ংকর প্রতারক ও মামলা বাণিজ্যের হোতা সিকদার লিটনের কথিত পরকীয়া প্রেমিকা তৃপ্তি খানমের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শরিফুল সরদার নামে এক ব্যক্তি। এই শরিফুল বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি__বিএলডিপির ফরিদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ৮ মার্চ তিনি ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এই অভিযোগ জানান। এতে তিনি লিখেছেন, সিকদার লিটনের ব্লাকমেইলিংয়ের অন্যতম সহযোগী তার পরকীয়া প্রেমিকা তৃপ্তি খানম। এই দু’জন আমার জীবননাশসহ সামাজিক সম্মান ক্ষুন্ন করতে পারে। তাই তাদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিষয়টি সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করতে অনুরোধ করা হলো।
জানা গেছে, সম্প্রতি তৃপ্তি খানম ও তার পরকীয়া প্রেমিক প্রতারক সিকদার লিটন ঢাকার একটি হোটেলে একত্রে রাত্রীযাপন করেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। একাধিক গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি হলে অনেকে তা নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন। শরিফুল ইসলামও তাদের একজন। ফেসবুকে তৃপ্তি ও লিটনকে নিয়ে লেখালেখি শেয়ার করায় সিকদার লিটন মেসেঞ্জারে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে দেখে শরিফুলকে দেখে নিবেন বলে হুমকিও দেন।
এদিকে বুধবার ফরিদপুর শহর থেকে সিকদার লিটনকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে তাকে আলফাডাঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়। বিস্ফোরক ও নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সিকদার লিটনকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালতে তাকে কারাগারে পাঠায়। লিটনের বিরুদ্ধে ঢাকার দু’টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৩টির বেশি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ তিনমাসে তার বিকাশ অ্যাকাউন্টে সাড়ে ২২ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। যা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন মামলায় সাধারণ মানুষকে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে উপার্জিত। তাছাড়া সিকদার লিটন আলফাডাঙ্গার তৃপ্তি খানমকে দিয়েও মামলা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
শরিফুল সরদার বলেন, ”ফেসবুকে দেখি সিকদার লিটন তৃপ্তি খানমকে নিয়ে ঢাকার একটি হোটেলে রাত্রীযাপন করেছে। যা আমি শেয়ার করি। পরে মেসেঞ্জারে আমাকে ফোন করে লিটন। সে অত্যন্ত রাগতস্বরে আমি কেন তৃপ্তি খানমের সঙ্গে তার হোটেলে রাত্রীযাপনের খবর ফেসবুকে শেয়ার করলাম জানতে চায়। আমি উত্তর কেন দেব জানতে চাইলে সিকদার লিটন আমাকে বলে ‘তুই সাবধান হয়ে যা, আমি তোকে দেখে নেবো। তুই এমন মার খাবি যে তোর হাঁটাচলার শক্তি হারাবি।’ এই বলে সে ফোন লাইন কেটে দেয়।”
শরিফুল আরও বলেন, সিকদার লিটন ভয়ংকর অপরাধী ও প্রতারক। সে একজন মামলাবাজ ও প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া তার পেশা। ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতারক সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা, জিডি আছে। সে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৮ সালে রাতের ভোটে ফরিদপুর-১ আসনের এমপি প্রয়াত মনজুর হোসেনের কাছের লোক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতো। ওই সময়ে প্রতারক সিকদার লিটন চাকরি দেওয়ার নাম করে এলাকার বহু মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। এক পর্যায়ে বহু মামলার আসামী সিকদার লিটন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও যায়। কিন্তু কারাগার থেকে বের হয়ে সে আরও বেশি অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এটাও শুনেছি যে প্রতারক সিকদার লিটন মাদক ব্যবসা, অবৈধ নারী সঙ্গ এমনকি মানব পাচারের মতো অপরাধেও যুক্ত। এমনকী চোরাচালানে সে জড়িত।’
শরিফুল জানান, তৃপ্তি খানমের সাথে সিকদার লিটন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এলাকায় এই তৃপ্তি খানম একজন উচ্ছৃঙ্খল নারী হিসেবে পরিচিত আর এই তৃপ্তি খানমকে সিকদার লিটন তার ব্লাকমেইলিংসহ নানা অপরাধের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে। উভয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড যাচাই করলেও তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ, অতি ঘনিষ্ঠতা, একত্রে রাত্রিবাসসহ নানা কিছুর প্রমাণ মিলবে। প্রতারক সিকদার লিটন ও তার পরকীয়া প্রেমিকা তৃপ্তি খানম আমারও ক্ষতি করতে পারে বলে আমি আশঙ্কা কাছি। আমার জীবননাশসহ সামাজিক সম্মান ক্ষুন্ন করতে তারা যে কোন হীন অপচেষ্টা নিতে পারে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিষয়টি সাধারণ ডায়েরী করতে পুলিশ সুপারকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
আলফাডাঙ্গার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল হাসান বলেন, সিকদার লিটন একজন ভয়ংকর ও পেশাদার অপরাধী। দেশের বিভিন্ন জেলায় তার প্রতারণা ফাঁদ বিস্তৃত। তার বহু বিবাহও এলাকায় আলোচিত-সমালোচিত।’