নির্বাচন পরে আগে বিচার সংস্কার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা

ফরিদপুর প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, আগে বিচার, সংস্কার, তারপর নির্বাচন দিতে হবে বলে দাবি করেন। সোমবার বিকালে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে সমাবেশে এ দাবি করেন তারা।

এ সময় তারা আগামী ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলিউশন’ ঘোষণা দেয়ার জন্য সরকারকে আল্টিমেটাম দেন। সমাবেশে মূখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানকে সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা ২৪’র আন্দোলনে জীবন দিয়েছে এবং আহত হয়েছে তাদের স্বীকৃতি এই ঘোষণাপত্রে থাকতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম স্বর্ণাক্ষরে ওই ঘোষণাপত্রে থাকতে হবে। বাংলাদেশে অবশ্যই যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন হবে। কিন্তু তার আগে বিচার ও সংস্কার করতে হবে দাবি করেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, আমাদের সামনে শহীদ পরিবার রয়েছে, তারা বিচারের জন্য আর্তনাদ করছে, সেই বিচার করতে হবে। খুনি হাসিনা যে সিস্টেমগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে সেই সিস্টেমগুলোকে সংস্কার করতে হবে।

সারজিস বলেন, এই বাংলাদেশ আর নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা চোখে চোখ রেখে পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করবো। পৃথিবীর যেকোনো ক্ষমতাধর বাংলাদেশকে ডমিনেট করে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করবে, আমরা সেই পররাষ্ট্রনীতি ছুড়ে ফেলে দেবো। তিনি সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেদিন আমাদের মাঝে স্বার্থের দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, দেশ এবং মানুষের আগে ব্যক্তিগত স্বার্থ প্রাধান্য পাবে সেদিনই আমাদের মাঝে বিভাজন শুরু হবে। এই বিভাজনকে কেন্দ্র করে ওই খুনি এবং তাদের দোসররা নতুন কোনো রূপে এই বাংলাদেশে ফিরে আসবে। দয়া করে কারও দালাল ও নিষ্ক্রিয় দর্শকে পরিণত হবেন না।

সমাবেশে সমাপনী বক্তব্যকালে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত একটি বিচারও আমরা দেখি নাই। পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ১৮ ও ২৪ এর নির্বাচনে যেভাবে ভোট কারচুপি করা হয়েছে সেগুলোর এখনো কোনো বিচার হয় নাই। আমরা অন্তর্বর্তীসরকারকে বলতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কারও যদি ভারতমুখী হওয়ার প্রবণতা থাকে তাহলে জনগণ আপনাদেরকে শেখ হাসিনার সঙ্গে সীমান্তের ওপারে উৎখাত করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে হাসনাত বলেন, অতীতে ঢাকার মসনদে কে বসবে সেটি নির্ধারিত হতো দিল্লি থেকে। আমরা দেখেছি, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো দিল্লিমুখী হতো। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে ঢাকার ক্ষমতায় কে বসবে সেটি আর দিল্লি থেকে নির্ধারিত হবে না। বরং সীমান্তের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে যে বাংলাদেশের মসনদে কে বসবে। সুতরাং আপনারা দিল্লিমুখী না হয়ে, ক্ষমতামুখী না হয়ে জনতামুখী হোন।

হাসনাত বাজার ব্যবস্থায় সিন্ডিকেটের উৎখাত চেয়ে বলেন, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছেন, সিন্ডিকেট এক হাত বদলে আরেক হাতে গেছে। সিন্ডিকেট যদি এক হাত বদলে আরেক হাতে যায়, এটা বলার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার হয় নাই। এই সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য আপনাকে বসানো হয়েছে। আমরা খুনি শেখ হাসিনার মতো এই সিন্ডিকেটকে উৎখাত চাই। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মকে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের এই বিপ্লবকে অনেকেই মেনে নিতে পারে নাই। আপনারা যদি এই তরুণ প্রজন্মের অকুতোভয়, আত্মবিশ্বাসকে সম্মান না জানান তাহলে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ সুখকর হবে না।
এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম, রিফাত রশিদ, নাবিলা তালুকদার, আশরেফা খাতুন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ফারহান হাসান অর্ণব, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কাজী রিয়াজ প্রমুখ। এর আগে জুলাই আন্দোলনে ফরিদপুরের নিহত প্রত্যেক পরিবারের খোঁজখবর নেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা।