মাদারীপুর প্রতিনিধি: মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বাবলাতলা এলাকায়, সালিশ বৈঠকে ধর্ষণের ন্যায় বিচার না পেয়ে ৭ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় প্রধান সালিশীকারী ইউপি সদস্যসহ অভিযুক্ত ১০ জনের নামে থানায় মামলা করেছে নিহত ছাত্রীর পরিবার।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারী) সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল মর্গে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে আসে।
পুলিশ, স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বাবলাতলা এলাকার চাঁনমিয়া মোল্লার মেয়ে ও বাবলাতলা জুনিয়র স্কুলের ৭ম শ্রেণির স্কুলছাত্রী হাফিজা আক্তারের (১৪) সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয় প্রতিবেশী আবুল কালাম সরদারের বড় ছেলে পিয়ার সরদারের (১৯)। দুজনের শারিরিক সম্পর্ক হলে ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে পিয়ার বিয়ের আশ্বাস দিলে সম্প্রতি ছাত্রীকে গর্ভপাতও করানো হয়। এরপর বিয়ে নিয়ে পিয়ার টালবাহানা শুরু করে।
বিষয়টি নিয়ে পিয়ারের পরিবারকে জানালে স্কুলছাত্রীকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায় পিয়ার ও তার পরিবার। পরে বেশ কয়েকবার পরিবারিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। সবশেষে মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশি রফি মুন্সির বাড়ির উঠানে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে শিবচরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন, স্থানীয় মাদবর উজ্জল খান, তাজেল মাদবর, জাহাঙ্গীর খাঁসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
সালিশে জানানো হয় অভিযুক্ত পিয়ার বিদেশ যাবার প্রস্তুতি নিয়েছে। সেকারণে সালিশকারীরা এই ছাত্রীর সাথে পিয়ারের ছোটভাই আলীর বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিয়ে না হলে অভিযুক্তের ১০ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই স্বিদ্ধান্তে সালিশে হট্টোগোল শুরু হয়। পরে সেখান থেকে চলে যান সালিশকারীরা। এই ঘটনার এই ছাত্রী অপমানে ও ধর্ষণের ন্যায় বিচার না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় গলায় রশিদ দিয়ে আত্মহত্যা করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনায় ঐ ছাত্রীর বড়ভাই নাসির মোল্লা বাদী হয়ে শিবচর থানায় প্রধান সালিশীকারী ইউপি সদস্য ও অভিযুক্ত পিয়ারসহ ১০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে অভিযুক্ত পিয়ার হোসেন। এদিকে শুক্রবার সকালে জেলা সদর হাসপাতালে নিহতের মরদেহ ময়না তদন্ত করা হয়েছে।
স্কুলছাত্রীর ভাই সজিব মোল্লা বলেন, দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন, স্থানীয় মাদবর উজ্জল খান, তাজেল মাদবর, জাহাঙ্গীর খাঁসহ অনেকেই উপস্থিত থেকে এই সালিশবৈঠকের আয়োজন করেন। সালিশকারীরা টাকাপয়সা খেয়ে তাদের মত করে সিদ্ধান্ত নেন। এটা আমরা ও আমার বোন মেনে নিতে পারিনি। তাই লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে আমার বোন। আমরা এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।
মেয়েটির দাদা সাইদুর রহমান বলেন, স্থানীয় মাদবররা এভাবে সালিশীতে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা বুঝতে পারিনি। এই ঘটনায় দায়ীদের কঠিন বিচার চাই। তা না হলে অন্যরা আবারো এমন ঘটনার ঘটানোর সাহস পাবে। সালিশকারীরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে আমার নাতনীর এমন অকাল মৃত্যু হতো না।
শিবচরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন বেপারী বলেন, আমরা ৭-৮ জন সালিশীতে অংশ নেই। দুইপক্ষের কথা শুনে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু মেয়েটি বলছে পিয়ারের সাথে সম্পর্ক ছিল, কিন্তু পিয়ারের ছোটভাই আলী দাবি করে তার সাথে মেয়েটির প্রেম ছিল। এটি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে আর সমাধান হয়নি। পরে সবাই যার যার মতো করে সালিশী থেকে চলে যাই।
আরেক সালিশীকারী উজ্জ্বল খান বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মেয়েটির সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো। বিয়ের দিনতারিখও ঠিক করা হয়েছিল। মেয়েটির পরিবার ভেবেছিল ছোটছেলের সাথে স্কুলছাত্রীর বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই হট্টোগোল শুরু হয়। পরে সবাই চলে যায়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকতার হোসেন বলেন, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।