যশোর প্রতিনিধি
সৎ নেতৃত্ব থেকে দেশ এখনো বঞ্চিত রয়ে গেছে। এই জায়গাটা পুরণ না হলে আমাদের জাতি সত্যিকার অর্থে মর্যাদাপূর্ণ জাতিতে পরিণত হতে পারবে না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা.শফিকুর রহমান একথা বলেন ।
তিনি বলেন,২৪ সালের ৫ আগষ্টের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিল দু:শাসন আর দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ।
আল্লাহ আমাদের এই দেশ উপহার দিয়েছেন। সাথে খনিজ সম্পদসহ অনেক কিছু দিয়েছেন। কিন্তূ আমাদের একটা জায়গাতে ঘাটতি রয়ে গেছে। সৎ নেতৃত্ব থেকে দেশ এখনো বঞ্চিত রয়ে গেছে। এই জায়গাটা পুরণ না হলে আমাদের জাতি সত্যিকার অর্থে মর্যাদাপূর্ণ জাতিতে পরিণত হতে পারবে না।
শুক্রবার সকালে যশোর জেলা ঈদগাহ মাঠে ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ডা. শফিকুর রহমান।
যশোর জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবু জাফর ও সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুসের যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাদ্দিস আবদুল খালেক ও মাওলানা আজিজুর রহমান। সংগীত পরিবেশন করে যশোর জেলা সাংস্কৃতিক সংসদ।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ড. আবদুল মতিন,ড. আলমগীর বিশ্বাস, ঝিনাইদহ জেলা আমীর অধ্যাপক আলী আযম, চুয়াডাঙ্গা জেলা আমীর এডভোকেট রুহুল আমীন, মাগুরা জেলা আমীর এমবি বাকের,নড়াইল জেলা আমীর আতাউর রহমান বাচচু, সাতক্ষীরা জেলা আমীর, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম। ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ, শহীদ আব্দুল্লার বাবা আব্দুল জব্বার, যশোর জেলার নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আবদুল মান্নান, যশোর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট গাজী এনামুল হক, মাওলানা আরশাদুল আলম, কেশব উপজেলা আমীর অধ্যাপক মুক্তার আলী,বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের জেলাশহর শিবির সভাপতি মোস্তফা কামাল প্রমূখ।
এর আগে আব্দুল্লাহ আল মামুনের অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মী সম্মেলনের সূচনা হয়। শহীদ আব্দুল্লাহর বাবা আবদুল জব্বার বলেন, আমার ছেলে ঢাকায় গুলি খেয়ে ১০০ দিন পর মারা গেছে। তিনি জামায়াতের কাছে দাবি করেন, তার ছেলের রক্তের বিনিময়ে এই দেশে যেন আল্লাহর বিধান কায়েম হয়। ভারত থেকে নিয়ে এসে যেন শেখ হাসিনার বিচার করা হয়। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি বলেন,সরকারী আইন মানতে গিয়ে যেন কোন মানুষকে হত্যা করা না হয়। প্রয়োজনে বাড়ি ফিরে যাও।
কর্মী সম্মেলন শুরুর আগেই সম্মেলনস্থলে ভরে যায় মানুষ আর মানুষে। দুপুরের দিকে জানা যায় মাঠের বাইরে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মানুষে মানুষে সয়লাব হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পর নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো যশোর শহর।
মঞ্চে উঠেই জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা:শফিকুর রহমান সামনে উপস্থিতিতে জনতাকে জিজ্ঞেস করেন, ৫ আগস্টের আগে কেমন ছিলেন ? সমস্বরে সবাই জবাব দেন- ভাল ছিলাম না। তিনি যশোরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ২৪ সালের ৫ আগষ্টের আগে দু:শাসন ও দুর্নীতিতে দেশকে ডুবিয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এই দলটি যখনই ক্ষমতায় এসেছে,মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ আগের বারও জনগণের ওপর শোষণ-অত্যাচার করেছিল। কিন্তু এবারের অত্যাচার-জুলুম ছিল অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। তাদের হেদায়াত কামনা করে তিনি বলেন কেউ কল্পনাও করেনি ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদ শেষ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন,দেশে স্বাধীন হয়েছে প্রথম কৃতিত্ব মহান আল্লাহ তায়ালার। এরপর আমাদের গর্বের সন্তানদের। আমাদের সন্তানরা একটা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। রংপুরের আমাদের এক সন্তান আবু সাইদ বুক চিতিয়ে বলেছিল‘ বুবের ভেতর তুমুল ঝর, বুক পেতোিছ গুলি কর’। মনে করেছিল গুলি করা হবে না। ন্যায় সঙ্গত দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্বতা জানিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। ভেবেছিল তাকে পুলিশ গুলি করবে না। কিন্তূ পুলিশ পর পর তিনটি গুলি করে শেষ করে দিয়েছিল।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ কওে বলেন, যশোরে উন্নয়নের ছোয়া নাই। এটি কি বাংলাদেশের অংশ না ? যদি তাই হয়, তাহলে তারা কেন তাদের ন্যায্য অধিকারটুকু পাচ্ছেন না যশোর একটি অন্যতম বঞ্চিত এলাকা। এটি নাগরিক উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র হওয়ার কথা। কিন্ত‘ কেন উন্নয়ন নাই। মানুষের বিবেক যখন কাজ করে না। মানুষের মনে যখন আল্লাহর ভয় থাকে না, তখন ক্ষমতায় বসার আগে মানুষের পা ধরে ভোট চায় আর ক্ষমতায় বসে গেলে মানুষকে ভুলে যায়। তিনি বলেন সুষম উন্নয়নের জন্য সুন্দর মন দরকার। তা না হলে বৈষম্য দূর করা সম্ভব না। যেখানেই যাই বৈষম্য দেখা যায়। সরকার বলেছিল উন্নয়নের রাজপথে। রোল মডেল। চুরি করে সমস্ত সম্পদ বাইরে নিয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান উল্লেখ করেন, আজ বাজারে আগুন। সিন্ডিকেট এখন হাতবদল হয়েছে। সরকার এখনো ভাঙতে পারেনি। একজন চাঁদাবাজ পালিয়েছে, আরেকজন চাঁদাবাজিতে লেগে গেছে। তিনি সামনের মানুষের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশ কি চাঁদাবাজ মুক্ত হয়েছে ? মাঠ থেকে সমস্বরে জবাব আসে ‘না—–’। এই সময়ে জামায়াতে ইসলামী বেশি ক্ষতিগ্র¯’ হয়েছে। জামায়াতের নেতাদের ফাসি দেওয়া হয়েছে। কার্যালয়গুলো তালা দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধন কেড়ে নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হাজার লাখো মামলা। বিনয়ের সাথে একটা কথা বলতেই হবে। যারা বুকের রক্ত দিয়ে আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেল তাদের রক্তের সাথে যেন আমরা বেইমানি না করি। তারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ঘুসখোরদের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আউয়াজ দিয়েছে। এই কাজটি যদি করেন তাহলে ঘৃণিত হবেন, নিন্দিত হবেন। আমরা আমাদের সকল সহকর্মীদের জানাই এসকল কাজে কেউ হাত বাড়াবেন না। কেউ চাঁদাবাজ হবেন না। কেউ ফুটপাতের দখলদার হবেন না। মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রাণি করবেন না। এই কাজ কেউ করবেন না।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আজকে শিক্ষার্থীরা মাস্টার্সডিগ্রী সার্টিফিকেট নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে। কাজ পায় না। তার একটা কারণ একটা গোষ্ঠির বাংলাদেশকে তাদের জমিদারি মনে করতো। তাদের আনুগত্য ছাড়া এদেশে কারো কোন অধিকার ছিল না। এখন তারা বিদায় নিয়েছে। এখনতো আর এরকম থাকা উচিত নয়। কিন্ত এদেশে শিক্ষার ব্যবস্থা নাই। ইনশা আল্লাহ আমরা এমন একট শিক্ষা ব্যবস্থা করবো শিক্ষার্থী কেবল সার্টিফিকেট নিয়ে বের হবে না। কাজ হাতে তুলে দেওয়া তবে। আমরা জাতিকে আর বিশৃঙ্খলায় পড়তে দেবো না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন একটা রাষ্ট্রে স্বপ্ন দেখে, যে রাষ্ট্রে আকাশ পাতাল ব্যবধান থাকবে না নাগরিকদের মধ্যে। কেউ গাছ তলা আবার কেউ ২০ তলায় থাকবে না। বিচার বিভাগকে মেরুদন্ড সোজা করে দেওয়া হবে; যাতে রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকেও দ্বিতীয় চোখে না দেখে একই চোখে দেখে। বিচার যদি কায়েম হয় তাহলে কাউকে অধিকার চাইতে হবে না। চাঁদাবাজ দখল দার ঘুষ অফিস আদালত বৈষম্য দূর করা হবে। মানবিক বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ, সম্রোজ্যবাদ থাকবে না। এখানে কোন সংখ্যা লঘু নাই। ধর্ম নিয়ে বিভাজন বিভেদ চলবে না। নারীরা অধিকার সম্মান পেয়ে বলবেন আমি এই দেশের গর্বিত মা।
তিনি উপস্থিত জনতাকে সুন্দর দেশ গড়ার অঙ্গিকার করে জামায়াতে ইসলামীর আমীর বলেন এমন রাষ্ট্র গঠনে আপনাদের হাত মজবুত করতে হবে। দিল শক্ত করতে হবে। কদম চালু করতে হবে। দৃষ্টি প্রসারিত করতে হবে। দু:শাসনমুক্ত দেশ গঠনে কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবেন মেন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আপনাদের দিকে মানুষ তাকিয়ে আছে। আপনাদের পারতেই হবে। আমরা যদি দেশের জন্য কাজ করি তহালে আপনাদের ভালবাসা চাইবো, সমর্থন এবং সহযোগিতা চাইবো। জাতীয় চ্যলেঞ্জ মোকাবেলা আমরা যেন আপনাদেও যেন আপনাদেও পাশে পাই।
মো. মোবারক হোসেন বলেন,ফ্যাসিস্ট সরকার ১৬ বছর মানুষকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলনকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য সমস্ত পরিকল্পনা করেছে। আমাদের রাহাবারদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করেছে। ৫ শ’ মানুষকে শহীদ করেছে ২ হাজার মানুষকে গুম করেছে। ৫ আগস্টের পর মানুষ একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মানের জন্য আশা করে আাছে। ফ্যাসিস্টরা টাকা পাচার করে দেশকে শেষ করে দিয়েছে। এই দেশকে বির্ণিমান করতে প্রয়োজন ইনসাফপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা।
মুহাদ্দিস আবদুল খালেক বলেন, বাতিলের হুংকারে আমাদের নেতারা কর্মীরা পিছুটান দেননি। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। হাত দিয়েছে, পা দিয়েছে যেমনটি জাতীয় কবি নজরুল বলেছেন ‘শের দেগা,নেহি দেগা আমামা’। এদেশকে ছেড়ে কোনদিন ছেড়ে যাবো না। আমাদের কেবলা কাবা, দিল্লী কিংবা ওয়াশিংটন না। কোরআনের শাসন আমাদের লক্ষ্য। ৫ আগস্ট ছিল আবাবিল পাখির ইতিহাস। মায়েরা ১০ মাসের শিশু নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। সজাগ থাকতে হবে। দিল্লীর বাবুরা উসকানী দিচ্ছে। দলমত জাতিধর্ম নির্বিশেষে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।
আজিজুর রহমান বলেন, যড়যন্ত্র শেষ হয়নি। দুটি মন্ত্রণালয় ছাই করে দিয়েছে। আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ৪৭ সালের, ৭১ সালের স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়েছে রাজনীতিবিদদের কারণে। যশোরকে অবহেলিত দাবি কওে তিনি বলেন, সীমানা বৃদ্ধি করে যশোরকে সমৃদ্ধ করা দরকার। স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একসাথে কাজ করার আহŸান জানান তিনি।
অধ্যাপক আলী আযম বলেন, আজকের সম্মেলন প্রমাণ করে নির্যাতন করে আদর্শ নির্মুল করা যায় না। চলুন জামায়াতের পতাকা তলে এসে দুর্নীতি এবং দখলদার উচ্ছেদ করি।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য যশোরের আপামর জনতা জামায়াতের সঙ্গেই রয়েছে।