আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিদ্যুতের বকেয়া বাবদ ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ডলার পাওনা দ্রুত পরিশোধের জন্য সহায়তা চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন ভারতের শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি।
সোমবার ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম এ বিষয়ে প্রতিবেদন করেছে।
ইকোনোমিকস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডে কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ৮০ কোটি ডলার পায় আদানি পাওয়ার। এই পাওনার জন্যই প্রধান উপদেষ্টার কাছে গৌতম আদানি চিঠি লিখেছেন বলে জানানো হয়েছে।
চিঠিতে আদানি বলেন, ‘আমরা যখন বাংলাদেশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বজায় রাখছি, সেই সময়ে ঋণদাতারা আমাদের ওপর কঠোর হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে থেকে আমরা যে ৮০ কোটি ডলার পাই, সেই অর্থ দ্রুত পরিশোধ করার জন্য হস্তক্ষেপ করতে আপনাকে অনুরোধ করছি।
২৭ আগস্ট তারিখ উল্লেখ করা চিঠিটির কপি ইকোনোমিক টাইমস পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ আদানিকে প্রতিমাসে বাংলাদেশের ৯০-৯৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের কথা। কিন্তু এর বিপরীতে মাসে ৪০-৪৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হচ্ছে, যে কারণে গত কয়েক মাসে বড় বকেয়া জমে গেছে।
চিঠিতে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ যে পাওনা হয়, তা নিয়মিত ভিত্তিতে পরিশোধ করার জন্যও অনুরোধ করছেন গৌতম আদানি।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, বিদ্যুতের এই বকেয়া ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে, যেটি আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে করা বিভিন্ন ব্যয়বহুল অবকাঠামো চুক্তির মধ্যে আদানির প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ কেনা চুক্তিকে অন্যতম বলে অভিহিত করেছে ড. ইউনূসের সরকার।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে আদানি পাওয়ার জানিয়েছে, ‘আর্থিক চাপ সত্ত্বেও আদানি পাওয়ার বাংলাদেশে বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য সরবরাহ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং তাদের জানিয়েছি যে পরিস্থিতি আর টেকসই পর্যায়ে নেই। কারণ, আমরা একদিকে যেমন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি বজায় রাখছি, অন্যদিকে তেমনই আমাদের ঋণদাতা ও সরবরাহকারীদের কাছে দেয়া অঙ্গীকারও রয়েছে।’ অর্থ পরিশোধের এই দায় বাংলাদেশের সার্বিক জ্বালানি সংকটেরই একটি অংশ, যেখানে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত দায়ের পরিমাণ ৩৭০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, আদানি বাংলাদেশের কাছে ৮০ কোটি ডলার পায়, তার মধ্যে ৪৯ কোটি ২০ লাখ ডলার পরিশোধ বিলম্বিত হয়েছে। দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে অন্তর্বর্তী সরকার এখন বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতার কাছে অর্থ সহায়তা চাইছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু একই সময়ে জ্বালানি-স্বল্পতায়ও ভুগছে। মূলত গ্যাসের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, সাবেক সরকারের নেয়া খোলা দরপত্র ছাড়াই বিদ্যুৎ কেনার মতো পদক্ষেপ দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ও অদক্ষতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে ইউনূস প্রশাসন পূর্ববর্তী জ্বালানি চুক্তিগুলো পুনঃমূল্যায়ন করার পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছে, যার লক্ষ্য প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র পুনরায় চালু করা এবং নিয়ন্ত্রণমূলক তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা।
এদিকে অবিলম্বে বকেয়া পরিশোধ না হলে কি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে আদানি পাওয়ার? এ বিষয়ে গোষ্ঠীটি জানিয়েছে আপাতত সেরকম কোনও পথে হাঁটছে না তারা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদানির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে আমাদের গড্ডা কেন্দ্র ভারতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। তাই অন্য কোথাও এই বিদুৎ সরবরাহ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’