সরাসরি হামলা চালানোর পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করবে ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তিনজন জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন,শুধুমাত্র গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি সম্পন্ন হলে ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালানোর পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করবে ইরান।

গত মাসে তেহরানে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের দায়ে ইসরায়েলে সরাসরি হামলার হুমকি দেয় ইরান। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন নৌবাহিনী ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করতে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধজাহাজ এবং একটি সাবমেরিন মোতায়েন করেছে।

ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, যদি গাজার যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হয়, যদি মনে হয় ইসরায়েল আলোচনায় গড়িমসি করছে তাহলে ইরান ও হিজবুল্লাহ একসঙ্গে ইসরায়েলে হামলা চালাবে। তবে ইরান ইসরায়েলকে এজন্য কতদিন সময় দেবে সেটি স্পষ্ট করেনি সূত্রটি।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্ত হামলায় নিহত হন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ। একই দিনে লেবাননে হামলা চালিয়ে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকুরকে হত্যা করে ইসরায়েল।

যদিও বৈরুতে হিজবুল্লাহ কমান্ডার ফুয়াদ শুকুরকে হত্যার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। তবে তেহরানে ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার বিষয়ে নেতানিয়াহুর সরকার কোনো মন্তব্য করেনি। তবে হামাস ও ইরান এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে।

এরপর থেকেই হানিয়াহকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী। এমনকি ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে হত্যার প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে হিজবুল্লাহ। ফলে যেকোনো সময় ইসরায়েলে ওপর ব্যাপক আকারে হামলা শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে নতুন আলোচনার পরিবর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধ জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস।

রবিবার মধ্যস্থতাকারীদের উদ্দেশ্যে এক বিবৃতিতে হামাস বলছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থিত বাইডেনের প্রস্তাব, যা গত ২ জুলাই গ্রহণ করা হয়েছিল- দ্রুত তা বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নতুন আলোচনার জন্য সময় দেওয়া মানে ইসরায়েলকে আগ্রাসন চালানোর জন্য আরও সময় দেওয়া। তাই নতুন প্রস্তাবের যাওয়ার পরিবর্তে এটি মেনে চলা উত্তম।’

বিবৃতি আরও বলা হয়, ‘ইসরায়েল আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে তার আগ্রাসন বাড়িয়েছে এবং আমাদের নেতা ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যাসহ আরও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে একটি বিষয় পরিস্কার হয়েছে- তারা আগ্রাসন চালিয়ে যেতে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে না পৌঁছাতে চায় না।’

এরআগে গত জুন মাসের শুরুতে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজে এই প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের সঙ্গে আলোচনা করেছে মধ্যস্থতাকারী মিশর, কাতার ও মার্কিন প্রতিনিধিরা।

বাইডেনের নতুন এই প্রস্তাবে তিনটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। প্রথম ধাপে বলা হয়েছে, ছয় সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলের সেনারা গাজার সমস্ত জনবহুল অঞ্চল থেকে সরে যাবে। ওই সময়ের মধ্যেই হামাস ৭ অক্টোবরের হামলায় আটক করা আরো কিছু ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। পাশাপাশি ইসরায়েলকেও কিছু ফিলিস্তিনি জেলবন্দিকে মুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপে সমস্ত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নেবে।

তৃতীয় ধাপে গাজায় নতুন করে ভেঙে পরা ঘর-বাড়ির পুনর্গঠন শুরু হবে। মানুষের কাছে আরো বেশি করে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

সূত্র: রয়টার্স