ঢাকা অফিস: ভারতে দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট শনিবার রাত ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও সরকার দলের শীর্ষনেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
এর আগে ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দর ত্যাগ করে। ভারতের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী শ্রী কীর্তিবর্ধন সিং এবং ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান পালাম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
দুদিনের সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকালে তিনি দিল্লি পৌঁছান। এর আগে নরেন্দ্র মোদির টানা তৃতীয় দফার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত আট জুন দিল্লি সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সফরের দুই সপ্তাহের মাথায় হলো দ্বিপাক্ষিক এই সফর।
দ্বিপাক্ষিক এই সফরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক কৌশল, স্বাস্থ্য সহযোগিতা ও রেল-যোগাযোগসহ ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। দুই নেতা একান্ত বৈঠকও করেন। পরে দুই নেতা যৌথ ব্রিফিং করেন।
ব্রিফিংয়ে দুই নেতা জানান, ‘ডিজিটাল অংশীদারত্ব’ এবং ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবুজ অংশীদারত্ব’ বিষয়ক দুটি সমন্বিত রূপকল্পকে সামনে রেখে কাজ করবে ভারত এবং বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে দুই যৌথ কার্যক্রমের নথি সই করে বাংলাদেশ-ভারত। এ দুটি হলো বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল অংশীদারত্বের বিষয়ে অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশ-ভারত সবুজ অংশীদারত্বের বিষয়ে অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ক নথি।
নতুন পাঁচটি সমঝোতা স্মারক হলো— বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের সুনীল অর্থনীতি এবং সমুদ্র সহযোগিতার বিষয়ে দুদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ভারত মহাসাগরের ওশানোগ্রাফির ওপর যৌথ গবেষণা ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে বাংলাদেশের বিওআরআই ও ভারতের সিএসআইআরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগের ওপর সমঝোতা স্মারক; যৌথ ছোট স্যাটেলাইট প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভারতের ন্যাশনাল স্পেস প্রোমোশন অ্যান্ড অথোরাইজেশন সেন্টারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক এবং ডিফেন্স স্টাফ কলেজের মধ্যে একাডেমিক সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক।
নবায়নকৃত তিন সমঝোতা স্মারক হলো— মৎস্যসম্পদ সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক।
বৈঠক শেষে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আসেন। বক্তব্যে দুজনেই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে দৃঢ় আখ্যা দিয়ে তার আরও এগিয়ে নিতে জোর দেন।
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে এদিন সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। সকাল ৯টার দিকে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি লাল গালিচা বিছিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা জানান নরেন্দ্র মোদি। এই সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।