কুষ্টিয়ায় ৮ কিলোমিটার জুড়ে পানের বরজে আগুন, প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আগুনে প্রায় আট কিলোমিটার এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে। এতে দুই হাজারেরও বেশি পানচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া গমসহ অন্যান্য ফসল পুড়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু বাড়িও রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার বেশি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।

রবিবার (১০ মার্চ) দুপুরে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদী-তীরবর্তী রায়টা, নিশ্চিন্দ্রপুরপাড়া, মাধবপুর, গোসাইপাড়া গ্রামের বরজে আগুন লাগে। ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর ও ঈশ্বরদী উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের আরও তিনটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল আরেফিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠু ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুণ্ডু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথরঘাট এলাকার পানের বরজ থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে আগুন গোসাইপাড়া, রায়টা, মাধবপুর, নিশ্চিন্দ্রপুরপাড়াসহ আশপাশের গ্রাম পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত সেটা জানা যায়নি। এই অগ্নিকাণ্ডে কয়েক হাজার বরজ পুড়ে গেছে।

বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের মধ্যে সেলিম, আসলাম উদ্দিন, আবুল হোসেন, আশরাফ, ইনামুল, মুক্তার, মন্টু সরদার, আমিন উদ্দিন, আবদুল হান্নান ও আমিন প্রামাণিক বলেন, আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনের রাস্তা এই বরজ। আমরা অনেকেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ ও ধারদেনা করে পান চাষ করেছিলাম। এখন কীভাবে আমরা ঋণ শোধ করব বা আবার ক্ষতিগ্রস্ত বরজগুলো কীভাবে মেরামত করব, তা ভেবে পাচ্ছি না। এ অবস্থায় সরকারিভাবে কিছুটা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হলে পুনরায় আমরা বরজ তৈরি করে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারতাম।

পানচাষি আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ১২ বিঘা জমিতে পান ছিল। পানের বরজ আগুনে না পুড়ে আমার বসতবাড়ি পুড়ে গেলেও এত কষ্ট পেতাম না। বরজ থেকে আয় দিয়েই আমাদের সংসার চলে। এখন আমি পরিবারের দুই বেলা খাবার কীভাবে জোগাড় করব!’

পানচাষি রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বরজের পান দুই মাস পর বিক্রি করেই মেয়ের বিয়ে দেব বলে দেখাশোনা করছিলাম। এখন বিয়ে তো দূরের কথা, কীভাবে সংসার চালাব ভেবে পাচ্ছি না।’

ভেড়ামারা পানচাষি সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি পানচাষির কয়েক হাজার বরজ পুড়ে গেছে। দুই মাস পরেই বরজ থেকে পান ভাঙা শুরু হতো। চাষিরা এত বড় ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবে? কয়েকশ চাষি ১২ বিঘা, ১০, ৫ বিঘা জমিতে পান চাষ করেছিলেন। এ ছাড়া বরজে শ্রমিকরা প্রতিদিন হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই অগ্নিকাণ্ডে তাদের পরিবারেও দুর্দশা নেমে এলো। সরকারের তরফ থেকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের জন্য সহায়তা কামনা করছি।’

বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন বলেন, ‘এ অগ্নিকাণ্ডে পানচাষিদের ও এলাকার মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এই অঞ্চলের অর্থনীতি নির্ভর করে পান চাষের ওপর। এই ক্ষতি সহজে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।’

ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রায়টা পাথরঘাট এলাকায় বরজে আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। কিন্তু বাতাসে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে তা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর ও ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। চারটি ইউনিট মিলে প্রায় চার ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ভেড়ামারার ইউএনও আকাশ কুমার কুণ্ডু জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। যেসব চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে সবকারি নিয়ম মেনে সহায়তা দেওয়া হবে।