ঢাকা অফিস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নবগঠিত মন্ত্রিসভার আকার আরও বাড়তে পারে। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা প্রধানমন্ত্রীকে ছাড়া ৩৬ জন। নতুন করে এর আকার বাড়িয়ে ৪৫-৪৮ জন করা হতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ সূত্রে জানা গেছে।
খুব শিগগিরই নতুন আরও ৭-১০ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হতে পারে। তবে এই যাত্রায় মন্ত্রীর তুলনায় প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বেশি হতে পারে বলে সূত্র জানায়।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নতুন করে মন্ত্রিসভায় যুক্ত হতে পারেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তিন-চারজন।
তারা আরও জানান, সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এখন সরকারের দৃষ্টি মন্ত্রিসভা বড় করার দিকে। খুব শিগগিরই মন্ত্রিসভার আকার বাড়ানোর বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। এজন্য একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আলোচনায় যেসব মন্ত্রণালয়
বর্তমান মন্ত্রিপরিষদে ২৫ জন মন্ত্রী দায়িত্ব থাকলেও এখনো এখনো দুটি মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হয়নি। এ দুটি হলো শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এই দুই মন্ত্রণালয়ে দুজন নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণমন্ত্রী দেওয়া হয়েছে বরাবরই। এবার এখন পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক একাই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এই মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ অতীতে এসব মন্ত্রণালয়ে একাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রীকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এবার মন্ত্রিপরিষদের আকার বাড়লে সেসব মন্ত্রণালয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ সূত্র মতে, সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত একজন সদস্যকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে। ওই নারী সদস্য এবার দ্বিতীয় দফায় সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পরপর দুবার সংরক্ষিত নারী সদস্য হওয়ার নজির কম। এছাড়া পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও একজন প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হতে পারে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গত সরকারে (টেকনোক্র্যাট) মন্ত্রী ছিলেন তিনজন, তাদের মধ্যে একজনকে এবারও সরকারে রাখা হয়েছে। এর বাইরে টেকনোক্র্যাট হিসেবে মন্ত্রীর দায়িত্বে এসেছেন আরও একজন। তাই নতুন করে মন্ত্রিসভার আকার বাড়লে আরও একজন টেকনোক্র্যাট হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন।
তবে এবার উত্তরবঙ্গ থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কম হওয়ায় স্থানীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রীর পদটি উত্তরবঙ্গ থেকে দেওয়া হতে পারে। বর্তমান মন্ত্রিসভায় ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাধান্য দেখা গেছে। রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধিত্ব কম। বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে আগের মন্ত্রিসভার চেয়ে এবার কম প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এই বিবেচনায় এবার কম পাওয়া বিভাগ ও দীর্ঘদিন মন্ত্রী না থাকা জেলাগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
২০০৯ ও ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের জায়গা দেওয়া হলেও গত সরকারের আমলে কাউকে মন্ত্রিপরিষদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের একজন জায়গা পেতে পারেন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে যেসব হেভিওয়েট মন্ত্রী বাদ পড়েছেন তারা মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই-একজন সদস্য আছেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী বাদে পূর্ণমন্ত্রী রয়েছেন ২৫ জন এবং প্রতিমন্ত্রী ১১ জন। ৩৭ সদস্যের এই মন্ত্রিসভায় কোনো উপমন্ত্রী নেই। এর আগের মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী ২৫-২৬ জনে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ২০ জনের মতো। এ ছাড়া তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন। সব মিলিয়ে আগের মন্ত্রিসভা ছিল ৪৯ সদস্যের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নতুন করে মন্ত্রিপরিষদের আকার বাড়বে। মন্ত্রী হবে করা, কে কে মন্ত্রিসভায় আসবেন এটা একান্ত প্রধানমন্ত্রী জানেন।
গত ১০ জানুয়ারি বুধবার সকাল ১০টায় পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য হিসাবে প্রথমে শপথ গ্রহণ করেন বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের ২৯৮ জন সংসদ সদস্যকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এর একদিন পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নতুন ৩৬ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর শপথ বাক্য পাঠ করান। গত সাতই জানুয়ারি সারাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।