কুষ্টিয়ায় গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান-আনিস

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা সঞ্চয় ও ডিপিএস এর কোটি কোটি টাকা নিয়ে বিশ্বাস ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিওর চেয়ারম্যান আনিস এখন লাপাত্তা। ভুক্তভোগীরা মামলা করেও কোন সমাধানের পথ দেখছেনা।

অভিযুক্ত আনিসুর রহমান আনিস উপজেলার সদরপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিম বিশ্বাসের ছেলে। কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগর বাজারে অফিস ভাড়া নিয়ে বিশ্বাস ফাউন্ডেশন এর কার্যক্রম করে আসছিলেন। এছাড়াও সারা দেশে প্রায় শতাধিক শাখা অফিস রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

সমবায় সমিতি আইন, ২০০২ (সংশোধিত) অনুযায়ী ব্যাংকিং কার্যক্রম জিপিএস, এফডিআর সঞ্চয়পত্র সেভিং হিসাব খুলে কোনো ক্রমেই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করা যাবে না। অথচ এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষুদ্রঋণের নামে গ্রামের সহজ-সরল লোকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকার আমানত আদায় করা হয়েছে।

আমানতকারীদের টাকা না দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই অফিসে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় এনজিও কর্তৃপক্ষ। গত নভেম্বরে টাকা ফেরত ও অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বাড়ি ঘেরাও করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শত শত গ্রাহক। এরপর থেকেই অভিযুক্ত আনিস সম্পূর্ণভাবে গা ঢাকা দিয়েছে। এর আগে বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন উঠলে স্থানীয় কিছু গ্রাহক তার পাসপোর্ট কেড়ে নেয়।

এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে এই মর্মে সাধারণ ডায়রি করে নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে। গ্রাহকদের ধারণা, অভিযুক্ত আনিস খুব দ্রুতই কৌশলে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দেশ ত্যাগ করতে পারে।

জানা গেছে, উপজেলা সমবায় অফিস থেকে কোন নিবন্ধন না নিয়ে ২০১৪ সালে এই সংস্থা মাঠকর্মীদের মাধ্যমে ঋণদান কর্মসূচি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। বর্তমানে তিন হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে অফিসে তালা দিয়ে এনজিওর মালিক আনিসুর এবং তার মাঠকর্মী উধাও হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ তাদের সবটুকু সঞ্চয় সমিতিতে জমা রাখেন। গ্রাহকের শত কোটি টাকা এই এনজিওতে সঞ্চয় রয়েছে। অনেক দিন ধরেই সমিতিটি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ করে সমিতির লোকজন উধাও হয়ে গেছে।

সরোয়ার আলম নামে এক ভক্তভোগী জানান, বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে আমার জমা আছে ৬০ লক্ষ টাকা। আমার মাধ্যমে কিছু আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে  আত্বসাত করেছে বিশ্বাস ফাউন্ডেশন। সরোয়ারের মতো অনেক গ্রাহক প্রতারিত হয়ে জানান, আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ সুপার’সহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আরেক ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমার উনিশ লক্ষ টাকা নিয়েছে লাপাত্তা এই আনিস। এদিকে আনিসকে দীর্ঘদিন ধরে অফিসে না পেয়ে গ্রাহকরা ইতিমধ্যেই ১৭৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে অর্থ ঋণ আদালতে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাসিবুর, মকবুল, বশির, কাজলী, রাজ্জাক, রিপন, রইস, তুষার, মনিরুল, সরোয়ার’সহ অর্ধশত বাদীর মামলার তথ্য রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে।
কুমারখালী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মাহাবুবুল হক বলেন, বিশ্বাস ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও গ্রাহকদের টাকা নিয়ে চলে গেছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে গ্রাহকরা মামলাও করেছে। বিষয়টি বিজ্ঞ আদালত আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা দ্রুত তাদের এই সমস্যা সমাধানের প্রত্যাশা করেন।