কুষ্টিয়ায় কমছে না চালের দাম, বাজারে অভিযান

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়াতে চালের বাজার এখনো লাগামহীন। সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্য মানছে না মিলমালিকরা। মিল গেট থেকে বেশি দামে চাল কেনার কারণে খুচরা বাজারে বাড়ছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা। চালের বাজার স্বাভাবিক রাখার জন্য কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা মিলমালিকদের নির্দেশ দিলেও তা কাজে আসছেনা। চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখতে জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজার নেতৃত্বে চালানো হচ্ছে অভিযানও।

গত মঙ্গলবার কুষ্টিয়ার সব চেয়ে চালের বড় মোকাম খাজানগরে এক অভিযান পরিচালনা করে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগে ২জন মিলমালিককে জরিমানা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মিল মালিকদের উদ্দেশে বলেছেন, অযৌক্তিক কারণে চালের দাম বাড়ানো কিম্বা কেউ ধান-চাল অবৈধ ভাবে মওজুদ করলে তার বিরদ্ধে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫৬ অনুযায়ী মিল মালিক ও গুদামের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

তিনি আরো জানান, মিলগেটে সরু ভাল চাল (মিনিকেট ও বাসমতি) প্রতিকেজি ৬২ টাকার উপরে বিক্রি করা যাবে না। কাজল লতা, স্বর্ণা ও অন্যান্য মোটা চাল বর্তমান বাজার থেকে ৩/৪ টাকা কমিয়ে বিক্রি করার জন্য জেলা প্রশাসক খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতিও আহ্বান জানান।

কুষ্টিয়া শহরের বড় বাজার ও পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, মিল মালিকরা দাম না কমালে আমরা কিভাবে দাম কমাবো। আমরা যে দামে খরিদ করি তার উপর কখনো ৫০ পয়সা কখনো ১ টাকা লাভে চাল বিক্রি করে আসছি। চালের দাম কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমাদের যে চাল খরিদ করা আছে ওই চাল বেশী দামে কিনা। তা হলে আমরা কি লোকসা দিয়ে ব্যবসা করবো। মিল মালিকরাতো কমাছেনা। এদিকে মিলমালিকরা বলছেন ধানের দাম বেশী হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। ধানের দাম কমালেই চালের দাম কমবে। লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করতে হলে মিল বন্ধ হয়ে যাবে।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) আব্দুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালককে বাজার মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল বলেন, খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন তারা যদি মিলগেট  থেকে কম দামে চাল কিনতে পারেন তা হলে সরকারের বেঁধে দেয়া দামে চাল বিক্রি করতে তাদের কোন আপত্তি নেই। সরকারের সিদ্ধান্ত যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা হবে। সে অনুযায়ী বুধবার সকালে হরিনারায়ণপুর বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে ২জন খুচরা ব্যবসায়ী বেশী দামে চাল বিক্রির অপরাধে একজনকে ২০ হাজার অপরজনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।

সরকার চালের দাম স্থিতিশীল রাখার তাগিদ দিলেও কুষ্টিয়াতে চালের দাম কমছে না কেন এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে জাফর ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের মালিক, কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু জাফর মোল্লা বলেন, চালের দাম নির্ধারিত হয় ধানের সরবরাহের উপর। ধান যখন ওঠে তখন এক শ্রেণীর ধনাঢ্য অসাধু চাল ব্যবসায়ী মাঠ থেকেই ধান সংগ্রহ করে বিভিন্ন গুদামে মওজুদ করে। এর পর সুযোগ বুঝে তারা চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। তিনি আরো বলেন চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারী পর্যায়ে ব্যাপক পরিমান ধান সংগ্রহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সরকারের হাতে ধান থাকলে কেউ ইচ্ছা করলে চালের দাম বাড়াতে পারবে না। তার পরও মানবিক কারণ ও জনগণের সুবিধার জন্য বেশী লাভ না করে  সরকারের বেঁধে দেয়া দামে চাল বিক্রি করা উচিৎ।

কুষ্টিয়ার খাজানগরের দাদা রাইচ মিলের মালিক ও চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয় নির্বাচনের পর ধানের দাম বাড়বে। এ গুজবের  কারণে গত ২৫ নভেম্বর থেকে খাজানগরের চালের মোকামে বাসমতি, মিনিকেট ধানের দাম প্রতি মণে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ এবং, মোটা ধান কাজল লতা, আটাশ ও স্বর্ণা ধানের দাম  ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বেড়ে যায়। সেই থেকে ধানের দাম কমেনি। ফলে বাধ্য হয়ে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়েছে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মিলগেটে বাসমতি ও মিনিকেট চালের দাম ৬২ টাকা নির্ধারণ করেছেন। এ দামে চাল বিক্রি করলে মিলমালিকদের কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা লোকসান হবে। তিনি বলেন ,আমাদের দাবি সরকার ধানের দাম কমালে আমরা কম মূল্যে চাল বিক্রি করতে পারবো। লোকসান দিয়ে তো কেউ ব্যবসা করতে পারবে না।

এদিকে বুধবার কুষ্টিয়ার বিভিন্ন বাজারে সরুচাল (মিনিকেট ও বাসমতি) প্রতিকেজি ৬৬ থেকে ৬৮ টাকা, কাজললতা ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা, আটাশ চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং স্বর্ণা চাল ৪৬ টাকা থেকে ৪৮ টাকা বিক্রি হয়েছে। এ ব্যাপারে ভোক্তরা দুষছে জনপ্রতিনিধিদের ও প্রশাসনের নীরবতাকে।