যশোরের গদখালিতে এবছরে ৭৫কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

আব্দার রহমান,যশোর
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে জমে ওঠেছে ফুলের বেচাকেনা। ১৬ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ বাজারে ৭০ থেকে  ৭৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানালেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম।
করোনাকালীন সময়ে ফুল বিক্রি কম হলেও  বর্তমানে ফুলের বেচাকেনা বেড়েছে বলে জানান তিনি। বিজয় দিবস,বসন্ত উৎসব, ভ্যালেনটাইন দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ফুল উৎপাদন ও বেচা-কেনায় ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন ফুল চাষী, পাইকারি ব্যবসায়ী,ক্রেতা-বিক্রেতারা।
রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি ফুল ক্রেতারা গদখালীতে এসে ফুল কিনে থাকেন। সারা বছর ফুলচাষীরা ফুল বিক্রি করলেও তাদের মূল লক্ষ্য থাকে ডিসেম্বার থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যো উৎসব গুলো। এছাড়া বাংলা নববর্ষেও ফুলের জমজমাট বেচাকেনা হয়ে থাকে।
কৃষি বিভাগও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গদখালী ও পানিসারা এলাকায় সাড়ে ৬ হাজারের বেশি কৃষক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, রডস্টিক, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, জিপসি, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার তিন উপজেলায় ফুল চাষ হয়ে থাকে।এ জেলায় মোট ৬৫০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলায় ফুল চাষ হয়েছে ৬৩০ হেক্টর জমিতে। ঝিকরগাছায় ফুল চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম।
এ উপজেলার গদখালি, পানিসারা, হাড়িয়া, নীলকন্ঠ নগর, চাওরা, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, চাঁদপুর, বাইশা,পাটুয়াপাড়া, নারানজালি গ্রামসহ প্রায় ৫০-৫৫টি গ্রামে ফুল চাষ হয়ে থাকে।
এছাড়া শার্শা উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে এবং কেশবপুর উপজেলায় ফুল চাষ হয়েছে ১ হেক্টরের সামান্য বেশি জমিতে। সদর উপজেলায় প্রায় ৯ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। দেশের ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালি থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। গদখালি বাজারের ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখানকার ফুল দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে।
গদখালী ফুলবাজার সূত্রে জানা গেছে, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। গোলাপ ফুল প্রতি পিস ৮-১০ টাকা, চায়না গোলাপ লংস্টিক রোজ ২৫-৩০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক ৭-৮ টাকা, গ্রাাডিওলাস ফুল রং ভেদে ১০-১৫ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ১২-১৪ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ৪-৫ টাকা, গাঁদা প্রতি হাজার সাড়ে তিনশো থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা, রডস্টিক প্রতি বান্ডিল ১৪০-১৫০ টাকা, জিপসি ফুল প্রতি আঁটি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পানিসারা গ্রামের এক ফুল চাষী বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের চাষ ও উৎপাদন ভালো হয়েছে। সামনের তিন উৎসব ঘিরে ফুলবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। ফুলের বাজারমূল্য ভালো থাকায় ফুল চাষীরা খুশি।
গদখালী বাজারের ফুলের একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, ১৬ ডিসেম্বার উপলক্ষ থেকেই ফুলের বাজার দর বেশ ভালো। ফলে ফুল চাষীরা লাভবান হচ্ছেন। এবাজার থেকে গত দুইদিনে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার ফুল পাইকারি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, ঝিকরগাছায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭০-৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়ে থাকে। এ উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারন, মাগুরা, নির্বাসখোলা ও শিমুলিয়া ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। এ ছয়টি ইউনিয়নের সাড়ে ৬ হাজারের বেশি ফুল চাষী ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এ কারণে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হবেন। এ বছর বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় ৭০ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, এ জেলায় ফুলের চাষ বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে টিউলিপ ফুলসহ বিভিন্ন ফুলের প্রদর্শনী, উদ্যোক্তা ও ফুল চাষীদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। ফুল চাষীদের ভারতসহ বিদেশে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।