যশোরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হওয়ার ঘটনায় কোতয়ালি থানায় মামলা

যশোর প্রতিনিধি 
যশোরে সুদখোরদের অব্যাহত হুমকী ও মান সম্মানের ভয়ে গৃহবধূ লাভলী শারমিন (৪৫) নিজ ঘরের বাঁশের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হওয়ার ঘটনায় কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। নিহত গৃহবধূর ছেলে নিশাত আল মামুন বাদি হয়ে ৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে চার সুদ খোরের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে। ঘটনাটি যশোর সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা পূর্বপাড়ায়। আসামীরা হচ্ছে, ওই গ্রামের সোহাগ হোসেন ওরফে চোর সোহাগের স্ত্রী পারুল খাতুন, একই এলাকার শুকুর আলীর স্ত্রী ববিতা বেগম, নূর আলীর স্ত্রী রুমা বেগম ও হাফিজুর রহমান ওরফে মাছো হাফিজুরের স্ত্রী শিরিন বেগমসহ তাদেরও সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামী। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, আসামী রুমা বেগমকে মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর রাতে শহরের বারান্দীপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে।
মামলায় বাদি উল্লেখ করেন, আসামীদের বাড়ি ও বাদির বাড়ি একই গ্রামের পাশাপাশি। আসামী পারুল ও ববিতা বেগম সুদের ব্যবসার সাথে জড়িত। আসামীরা এলাকার সাধারণ মানুষকে টাকা ধার প্রদান করে পরবর্তীতে ধারের টাকার সুদ হিসেবে আদায় করে। বাদির ব্যবসার প্রয়োজনে তার মা লাভলি শারমিন বিগত ৩ বছর পূর্বে আসামী পারুল এর নিকট হতে ১লাখ ২০ হাজার টাকা উচ্চ সুদে ধার হিসেবে গ্রহন করে। পরবর্তীতে বাদির পরিবারের পক্ষ থেকে পারুল খাতুনের নিকট হতে গ্রহনকৃত টাকা নির্ধারিত সময়ে মধ্যে পরিশোধ কওে দেয়। তার পরও ধার স্বরুপ দেওয়া টাকার সুদ দাবী করে বাদির মায়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। গত ২০ নভেম্বর রাত ৮ টায় উল্লেখিথ সকল আসামীরাসহ তাদের সহযোগী আসামী পারুল খাতুন, ববিতা বেগম, রুমা বেগম, শিরিন বেগম বাদির বাড়িতে প্রবেশ করে। আসামী পারুল বেগম বাদির মায়ের কাছে সুদেও টাকা দাবি করে। কিন্তু বাদির মাতা সুদের টাকা প্রদানের রাজি না হওয়ায় আসামীরা বাদির মাতাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। যার কারনে মান সম্মানের ভয়ে বাদির মাতা আসামীদের কিছুুদিন সময় প্রার্থনা করে। ফলে আসামীরা পরবর্তীতে সুদের টাকা যোগাড় করে রাখার হুমকী দিয়ে চলে যায়। সাংসারিক অভাব অনটনের কারনে বেশ কিছুদিন ধরে বাদির পিতার সাথে মনোমালিন্য চলমান ছিল। গত ৩০ নভেম্বও রাত সোয়া ১০ টার সময় সকল আসামীরাসহ তাদের সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামীরা পূর্বের ন্যায় বাদির বাড়ির ভিতওে প্রবেশ করে পারুল বেগম সুদের টাকা দিতে বলে। কিন্তু সাংসারিক অভাব অনটনের কারনে টাকা যোগাড় না হওয়ায় টাকা প্রদাদে ব্যর্থ হয়। তখন সকল আসামীরা বাদির মায়ের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ দিয়ে বলে আগামী সাত দিনের মধ্যে টাকা যোগাড় করে রাখবি। যদি টাকা দিতে না পারিস তাহলে গলায় দঁড়ি নিয়ে মরবি। টাকা না দিলে তোকে ছাড় দেওয়া হবে না। সর্বদা লোক সম্মুখে মানসম্মানের হানি ঘটানো হবে। এরপর আসামীরা বাদির মাকে যেখানে সেখানে অপমান জনক কথাবার্তা বলে মানসিক চাপ দিতে থাকে। যার কারনে বাদির মাতা প্রচন্ডভাবে মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। গত ৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে ৮ টার মধ্যে যে কোন সময় আসামীদের চাপে ও তাদেও কথায় মনে আঘাত পেয়ে মান সম্মানের ভয়ে ও অপমানিত হয়ে বসত ঘরের বাঁশের আড়ার সাথে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লেগে আত্মহত্যা করে। বাদির মাতা আত্মহত্যা করার পূর্বে তার নিজ হাতে কল দিয়ে বাম হাতের উপর ও নিচের অংশে আমার মৃত্যুর জন্য রবি,সুদখর পারুল,রুমা,ববিতা এবং বাম হাতের তালুতে সুদখোর পারুল লিখে আত্মহত্যা করে। তার মৃত্যুর জন্য আসামীরা দায়ী থাকবে বলে উল্লেখ করেন। মামলা হওয়ার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা রুমা বেগমকে গ্রেফতার করে বুধবার আদালতে সোপর্দ করে।