যশোরের চৌগাছায় পুত্রবধূকে ধর্ষনে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করেছে শ্বশুর ? গ্রেফতার ৩

চৌগাছা (যশোর)প্রতিনিধিঃ 
যশোরের চৌগাছায় নিজ পুত্রবধূ ও দুই সন্তানের জননী (রাব্বী (১০) সাব্বির (৩)) ইসমত আরাকে ধর্ষন শেষে হত্যা করেছে শ্বশুর আনিছুর মন্ডল (৬০)। গত শুক্রবার আনুমানিক বিকাল ৫টার দিকে উপজেলার মুক্তদাহ গ্রামের পূর্বপাড়ার নিজ বাড়িতে আনিছুর মন্ডল তার ছেলের বউকে ধর্ষন শেষে হত্যা করেন। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় নিহতের পিতা, মা, ভাবি ঝর্না বেগমসহ অন্য দুই বোন এই অভিযোগ করেন। তবে পুলিশ বলছে ধর্ষনে ব্যর্থ হয়েই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
এঘটনায় রাতেই অভিযুক্ত আনিছুর মন্ডল, তার স্ত্রী হালিমা বেগম (৫২) এবং নিহতের স্বামী মজনুুর রহমান মন্ডল (৩২)কে গ্রেফতার করে চৌগাছা থানা পুলিশ।
শনিবার নিহতের ভাই সেলিম রেজা বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত তিনজনকে আসামী করে চৌগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ইসমত আরা চৌগাছা পৌরসভার বিশ্বাস পাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি মশিয়ার রহমানের মেয়ে এবং পাতিবিলা ইউনিয়নের মুক্তদাহ গ্রামের মজনুর রহমানের স্ত্রী ছিলেন।
এজাহারে নিহতের ভাই বলেছেন, ১ নং অভিযুক্ত আনিছুর মন্ডল বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে প্রায়ই আমার বোনকে কুপ্রস্তাবসহ বিভিন্নভাবে শ্লীতহানির চেষ্টা করে আসছিল। গতকাল ৩০ জুন আনিছুর মন্ডল আমার বোনকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপরে অন্যান্য আসামীদের যোগ সাজেশে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
তবে নিহত গৃহবধূর ভাবী ঝর্না বেগমসহ মা এবং অন্য বোনদের দাবী ইসমত আরাকে ধর্ষণ করে গলা টিপে হত্যা করেছে তার শ্বশুর আনিছুর মন্ডল।
নিহতের ভাবী ঝর্না বেগম বলেন, গতকাল এশার নামাজ শেষে ইসমত আরার খালা শাশুড়ি (আমাদের বিশ্বাস পাড়া গ্রামের প্রতিবেশি) হিরা বেগম আমাদেরকে তার মৃত্যুর খবর দেন। তিনি প্রথমে গ্যাস ফম করে কিছুক্ষন পরে গলায় দড়ি দিয়ে ইসমত আরা মারা গেছে বলে জানান। খবর পেয়ে আমি নিহতের বাড়ি গিয়ে দেখি তার শ্বশুর ঘরের বাইরে খাটে বসে বিড়ি খাচ্ছে। তখন একজন রাব্বির মা (নিহত ইসমত আরা) কোথায় জানতে চাইলে অভিযুক্ত আনিছুর রহমান জানেন না বলে জানান। ঝর্না বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশের নির্দেশে একজন মহিলা পুলিশকে সাথে নিয়ে লাশের সুরতহাল করা হয়। সে সময় দেখি তার কাপড় ছেড়া, এবং সেলোয়ার খোলা। নিহতের নাক ও যৌনাঙ্গ রক্তাত্ত্ব এবং গলায় আঙ্গুলের ছাপসহ শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট ছিল।
নিহতের মাসহ অন্যন্ন স্বজনরা বলেন, এরআগেও ওর শ্বশুর তাকে কয়েকবার ধর্ষনের চেষ্টা করেছিল। তখন তার স্বামী এবং তার শাশুড়িকে আমরা জানিয়েছিলাম। সেসময় তার শাশুড়ি এরকম ঘটনা আর হবেনা বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু তারা কেউ তাকে বাচাতে চেষ্টা করেননি।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ইসমত আরার শাশুড়ি,স্বামী ও সন্তানরা পাশের গ্রামে তার নানী শাশুড়ি বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছিলেন। সেসময় বাড়িতে ইসমত আরা ও তার শ্বশুর একা তাদের নিজ বাড়িতে ছিল। এবং বিকালের দিকে এই হত্যাকান্ড ঘটে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায় আনিছুর মন্ডল গতকাল পাশের মসজিদে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে নিজ বাড়িতে ছিলেন। তখনও সেই বাড়ির একটি ছোট ঘরে ইসমত আরার লাশ পড়ে ছিল। এবং তিনি বাড়িতে এসে খাটে বসে বিড়ি খাচ্ছিলেন। এরপরে পুলিশ গিয়ে তাকেসহ অন্যান্যদেরকে গ্রেফতার করে।
এ ঘটনায় মামলার কথা নিশ্চিত করে চৌগাছা থানার ওসি (তদন্ত) জেল্লাল হোসেন বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। লাশের সুরতহাল শেষে ওই রাতেই অভিযুক্তদেরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য লাশ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং গ্রেফতারকৃতদেরকে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। তবে তিনি বলেন ধর্ষনে ব্যর্থ হয়েই নিহতের শ্বশুর আনিছুর মন্ডল তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে আমার কাছে স্বীকার করেছে। তারপরেও ময়না তদন্তের ফলাফল না পেয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।