যশোরের গৃহবধূ স্বপ্না রানী চৌধুরী আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় আসামি রাশেদ জেলহাজতে

যশোর প্রতিনিধ: যশোরের গৃহবধূ স্বপ্না রানী চৌধুরীকে আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার আসামি রাশেদ মৃধাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার এই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করলে জামিন নামঞ্জুর করে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আহমেদ তাকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
আসামি রাশেদ মৃধা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বোরাদি গরংগল গ্রামের সেলিম মৃধার ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, মৃত গৃহবধূ স্বপ্না রানী চৌধুরী যশোর আদালতের একজন আইনজীবী এবং শহরের লোন অফিসপাড়ার মৃত ননী গোপাল চৌধুরীর ছেলে কোমল কুমার চৌধুরীর স্ত্রী। ১৯৯৮ সালের ১৯ এপ্রিল শাস্ত্রীয় মতে স্বপ্না রানী চৌধুরীকে বিয়ে করেন কোমল চৌধুরী। দাম্পত্য জীবনে দুই মেয়ে একটি ছেলের জন্ম হয়। ২০২১ সালে আসামির সাথে স্বপ্না রানীর ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। ওই বছরের জুন মাসে বাদীর যশোর শহরের লোন অফিসপাড়ার বাড়িতে  বেড়াতে আসে আসামি রাশেদ মৃধা। আসামি রাশেদ মৃধাকে ওই সময় মৃতা স্বপ্না রানীর বান্ধবীর ভাই বলে পরিচয় করিয়ে দেন তার পরিবারের সাথে। তাছাড়া ধর্ম ভাই বলেও তার স্বামী কোমল চৌধুরীকে জানান স্বপ্না। সেখানে চারদিন অবস্থান শেষে রাশেদ মৃধা বাদীর বাড়ি থেকে চলে যায়। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে রাশেদ আবারো এসে চারদিন অবস্থান করেন। এতে বাদীর সন্দেহ হওয়ায় রাশেদের সাথে অন্য কোন সম্পর্ক না করার জন্য স্ত্রীকে বলা হয়। ওই বছরের ১০ ও ১১ জানুয়ারি বাদীকে মোবাইল করে রাশেদের মা জানান তার ছোট ছেলে বিদেশে যাবে তাই স্বপ্নাকে তার বাড়িতে বেড়াতে যেতে হবে। সে মোতাবেক ১২ জানুয়ারি স্বপ্না রানী রাশেদের বাড়িতে বেড়াতে যান। চারদিন পরে ১৫ জানুয়ারি সেখান থেকে আবার বাড়ি ফিরে আসেন স্বপ্না। কিন্তু ফিরে আসার পরে স্বপ্না কেমন যেন মানষিক বিপর্যয় ও বিষন্নতা ভাব দেখে বাদী তার কাছে কারণ জানতে চান। এসময় স্বপ্না জানান আসামি রাশেদ তার বাড়িতে যাওয়ার পরে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। তাছাড়া শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি সে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেছে। বর্তমানে সে মোবাইল করে বলছে তার ইচ্ছামত শারীরিক সম্পর্ক না করলে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিবে।
এই ব্যাপারে বাদী কোমল চৌধুরী তার স্ত্রী স্বপ্নাকে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য সান্তনা দেন। একই বছরের গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে বাদী প্রয়োজনীয় কাজে বাসা থেকে বের হন। ছেলে-মেয়েরারাও যে যারমত বের হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়িতে গিয়ে ছেলে দেখে ঘরের ভিতর থেকে ছিটকেনি দেয়া। অনেক ডাকাডাকি করেও তার ডাক শোনেনি। পরে আশপাশের লোকজন নিয়ে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে দেখেন স্বপ্না রানী ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত অবস্থায় ঝুলন্ত আছেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের লোকেরা তার দেহটি দাহ করে।
এই ব্যাপারে স্বপ্নার পিতা ওই সময় কোতোয়ালি থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। পরবর্তীতে স্বপ্না রানীর মোবাইল ফোনে দেখা যায় আসামি রাশেদ তাকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়া, আত্মহত্যার জন্য তার মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও তার কাছে ফেসবুকের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছে।
২০২২ সালের ৩ মার্চ এই ঘটনায় স্বপ্নার স্বামী যশোর আদালতে মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র পুলিশ পরিদর্শক তৈয়বুর রহমান রাশেদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাশেদ ওই মামলায় যশোর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছে।