রাজশাহী প্রতিনিধি: আগামী ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করার লক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে তাদেরকে প্রটোকল দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগের পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।
তবে বিগত সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে এলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে অভ্যর্থনা জানানো ছিল সাধারণ চিত্র। তাদেরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য মোটরসাইকেল শোডাউন, রাস্তায় অবস্থান করাসহ বিভিন্ন আয়োজন করে থাকেন ছাত্রলীগ। কিন্তু এবার দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র। নবনির্বাচিত ছাত্রলীগের এই দুই কেন্দ্রীয় নেতা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেও তেমন কোনো আড়ম্বরপূর্ণ অভ্যর্থনা জানাতে দেখা যায়নি। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে তেমন কোনো উৎসুক আমেজও লক্ষ করা যায়নি।
এর কারণ খোঁজ করতে গেলে প্রথমেই দৃশ্যমান হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নিস্ক্রিয়তা। এক বছর মেয়াদি কমিটি হয় ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর। কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে সাত বছর হতে চললেও নতুন নেতৃত্বের দেখা পায়নি পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। অনেকেই অভিমান নিয়ে কর্মী থেকেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। নতুন কমিটি কবে হতে পারে তা নিয়ে এখনো রয়েছে ধূম্রজাল। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে তৈরি হয়েছে একধরনের হতাশা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান কমিটি ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট। এরমধ্যে অধিকাংশ নেতার বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই। অনেকেই বিয়ে করেছেন এবং পড়াশোনা শেষ করে চাকরিও করছেন। ক্যাম্পাস ছেড়েছেন দেড় শতাধিক নেতাকর্মী। শাখা ছাত্রলীগে পদপ্রত্যাশীরা জানান, শাখা ছাত্রলীগের ২৫১ জন সদস্যের মধ্যে দেড় শতাধিক নেতাকর্মী ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছেন। যাদের মধ্যে সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিভিন্ন সম্পাদক ও উপ-সম্পাদকসহ ২৫ জনেরও বেশি নেতা বর্তমানে বিবাহিত। চাকরিতে প্রবেশ করেছেন প্রায় অর্ধশত সিনিয়র নেতাকর্মী। পড়াশোনা শেষে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, এযাবৎকালের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জনপ্রিয়, ছাত্রসমাজের আস্থার প্রতীক সাদ্দাম ভাই ও সাধারণ সম্পাদক ইনান ভাইয়ের আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ একটি সাদামাটা আয়োজন করে। যা দেখে অনেকেই উম্মা প্রকাশ করেন। মূলত সিট বাণিজ্যের প্রভাবে অরাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা সম্পন্ন এবং স্বাধীনতা বিরোধী চিন্তাচেতনা লালনকারীরাই বর্তমানে হলে সর্বাধিক সিট দখল করে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ১২শতাধিকের অধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মী থাকলেও তাদের অনুপস্থিতও হতাশজনক।
মূলত দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় এ স্থবিরতা কাজ করছে বলে জানান এ ছাত্রলীগ নেতা।
সাত বছরেও কমিটি না হওয়ায় এমন ভঙ্গুর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে আরেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, সারা বাংলার ছাত্রসমাজ বিচক্ষণ দুই নেতা সভাপতি সাদ্দাম ভাই ও সাধারণ সম্পাদক ইনান ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচার মিছিল অংশগ্রহণ করেছে কিন্তু তাদেরকে অভ্যার্থনা জন্য যে পরিমাণ কর্মী থাকার কথা ছিল তার এক চতুর্থাংশও ছিলো না।
তিনি আরও বলেন, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার কমিটি ঘোষণা করা হয়নি ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অবস্থা যেমন লাজুক তেমনি কর্মীরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। টাকা দিয়ে হলে কর্মী তুললে অবশ্যই মিছিলে আসতে বাধ্য নয় তারা। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাড়াতে হলে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দিয়ে ছাত্রলীগকে ঐকবদ্ধ ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা উচিত।
এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মোটরসাইকেল শোডাউন ও রাস্তায় অবস্থান করাসহ এমন আড়ম্বরপূর্ণ অভ্যর্থনা পছন্দ করেন না। এমনটাই ছাত্রলীগের আদর্শ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
কর্মীদের উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল করার জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম নিয়ে রাজশাহীতে অবস্থান করেছিলেন তারা। বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা দেরি হওয়ার ফলে অনেক কর্মীদের ক্লাস-পরীক্ষা থাকায় তারা চলে যায়। তবুও উপস্থিতি খারাপ ছিল তেমনটা নয় বলে জানান এ সভাপতি।