মহামারি করোনাভাইরাস আর ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেও সরকার শিক্ষার্থীদের কথা ভোলেনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা অফিস: তার সরকারের সময়ে দেশের এত উন্নয়ন-অগ্রগতির পরও যারা সমালোচনা করেন তারা ‘চোখ থাকতেও দেখে না’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমালোচনাকারীদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এত কিছু করার পরও একটা শ্রেণি বলবে কিছুই করি নাই।

‘‘ওই ‘কিছুই করি নাই শ্রেণি’ চোখ থাকতেও দেখে না। তারা দেখবেও না। তাদের মাথায় ওই ‘নাই নাই’ শব্দ ঢুকে আছে। ‘নাই নাই’ শুনবো না, আমরা সব করবো। আমাদের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’’
২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হল থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি।
মহামারি করোনাভাইরাস আর ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেও সরকার দেশের শিক্ষার্থীদের কথা ভোলেনি বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের উদ্যোগের ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়ার হার কমেছে।
শিক্ষা জাতিকে দারিদ্র্যমুক্ত করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতের কোনো সরকার শিক্ষার জন্য তেমন কিছুই করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার সোনার বাংলা গড়ার জন্য শিক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের জন্য শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেই। কারণ শিক্ষাই দারিদ্র্য মুক্তির প্রধান হাতিয়ার।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সরকার শিক্ষার্থীদের নতুন বই ছাপানোকে গুরুত্ব দিয়েছে। এছাড়াও সরকারি উদ্যোগের ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়ার হার কমেছে।’

শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত চিন্তার সুযোগ দিতে হবে

শিক্ষার্থীদের মুখস্থ পড়ার পাশাপাশি মেধা বিকাশের জন্য উপযুক্ত চিন্তার সুযোগ দিতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে (শিক্ষার্থী) কী বিষয়ে নতুন কিছু করতে পারে, সেটা আমরা দেখতে চাই। সবার জন্য নতুন নতুন জ্ঞান ও গবেষণার পথ উন্মুক্ত করতে হবে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা যাতে বহুমুখী শিক্ষা পায়, সে ব্যবস্থা করেছি।’

সব ধরনের শিক্ষার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছি

দেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিভিত্তিক আর অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি স্থাপনের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও করে দিয়েছি। আমরা জাহাজ বানাবো, যুদ্ধ জাহাজ এবং প্লেনও বানাবো। এগুলো আমাদের ছেলে-মেয়েদেরই করতে হবে। এজন্য তাদের জন্য সব ধরনের শিক্ষার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছি।’

২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার বিষয়টি আবারো পুনর্ব্যক্ত করেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের পুরো জনগোষ্ঠী প্রযুক্তি জ্ঞানে স্মার্ট হবে।’

এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘পারবে না আমাদের ছেলে-মেয়েরা? জবাবে শিক্ষার্থীরা বলে, ‘পারবো।’

শীত আর ডেঙ্গু নিয়ে মা-বাবাকে পরামর্শ

ছেলে-মেয়েদের আন্তরিকতার সঙ্গে গাইড করলে তারা তত বেশি দক্ষ হয়ে উঠবে বলে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে যতবেশি এই ছেলে-মেয়েদের গাইড করবো, তারা ততবেশি দক্ষ হয়ে উঠবে।’

‘এখন শীত পড়ছে, গরম কাপড় পরতে হবে। শীতে মশা বাড়ে, ডেঙ্গু হয়। এটার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। স্কুল-কলেজ-বাড়িঘর নিজের প্রতিষ্ঠান-ঘর নিজেদের পরিষ্কার রাখতে হবে।’

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

১ জানুয়ারি নতুন ইংরেজি বছরের প্রথম দিন থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী পর্যায়ক্রমে নতুন বই হাতে পাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে কেন্দ্রীয় পাঠ্যবই উৎসব উদযাপন করবে।

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আয়োজন করা হবে প্রাথমিক পর্যায়ের বইয়ের কেন্দ্রীয় উৎসব।