নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক মন্দায় খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় কৃষির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে দেশের কোনো জমি পতিত না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সরকাপ্রধান। চাষাবাদে আগ্রহী করতে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদের বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ, সার ও বীজ দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বোরোর আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রায় ১৭০ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর আওতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার পাচ্ছেন সারাদেশের ২৭ লাখ কৃষক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনটি ক্যাটাগরিতে এ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ধানের উৎপাদন বাড়াতে ১৫ লাখ কৃষক প্রায় ৮২ কোটি টাকার ধানবীজ পাবে। প্রতি কৃষক বিনামূল্যে ২ কেজি ধানবীজ পাবেন।
উচ্চফলনশীল জাতের উৎপাদন বাড়াতে প্রায় ৭৩ কোটি টাকার প্রণোদনা পাবে উপকারভোগী কৃষক ১২ লাখ। এতে একজন কৃষক চাষের জন্য বিঘাপ্রতি প্রয়োজনীয় ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে পাচ্ছেন।
এছাড়া কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের সুবিধার্থে একটি মাঠে একই সময়ে ধান লাগানো ও কাটার জন্য ১৫ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এর আওতায় ৬১টি জেলায় ১১০টি ব্লক বা প্রদর্শনী স্থাপিত হবে। প্রতিটি প্রদর্শনী হবে ৫০ একর জমিতে, খরচ হবে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বাজেট কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাত থেকে এ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে এসব প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। এরই মধ্যে গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ প্রণোদনা বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে চট্টগ্রামের ৮১ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি রবি মৌসুমে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার হেক্টর জমি। বোরো আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিন ক্যাটাগরিতে দেওয়া হচ্ছে প্রণোদনা। বোরো আবাদে দুই ক্যাটাগরিতে দেওয়া হবে ৭৩ হাজার কৃষককে। পাশাপাশি রবিশস্য উৎপাদনকারী আরও ৭ হাজার ৬৫০ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, চলতি রবি মৌসুমে বোরো ও রবিশস্যের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার রেকর্ড সংখ্যক প্রণোদনা দিচ্ছে। এতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
খাদ্য সংকট নিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আগামী বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশের পতিত আবাদ জমির প্রতিটি ইঞ্চি কাজে লাগাতে হবে খাদ্য উৎপাদনের জন্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বোরো উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষকদের মধ্যে উচ্চফলনশীল উফশী ও হাইব্রিড জাতের বীজ এবং সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। উৎপাদন বাড়াতে এসএল-৮ এইচ বীজ কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।
একটি জেলার চিত্র:
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার বোয়ালখালীতে চার হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ১৪০০ জন কৃষক। পটিয়া (কর্ণফুলীসহ) ১৩ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৩৭০০ জন কৃষক। আনোয়ারা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় সাত হাজার ৪৮০ হেক্টর জমি। প্রণোদনা পেয়েছেন ৪৫০০ জন কৃষক।
চন্দনাইশে আট হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ২৬৫০ জন কৃষক। লোহাগাড়া উপজেলায় ১১ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৩০০০ জন কৃষক। সাতকানিয়ায় ১২ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৫১৫০ জন কৃষক।
বাঁশখালীতে ১৪ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৭৭৫০ জন কৃষক। মিরসরাই উপজেলায় ২১ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এর বিপরীতে প্রণোদনা পাচ্ছেন ১২৩০ জন কৃষক। ফটিকছড়িতে ২১ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রণোদনা পেয়েছেন ৬০০০ কৃষক।
হাটহাজারীতে নয় হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৩৫০০ জন। রাউজানে ১১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রণোদনা পেয়েছেন ৩৪২০ জন কৃষক।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১৫ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ৫৪৮০ জন কৃষক। সন্দ্বীপে ২৪ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। প্রণোদনা পেয়েছেন ১০০ জন কৃষক। এ ধাপে ৪৮ হাজার কৃষকের মধ্যে দুই কেজি করে হাইব্রিড বীজ দেওয়া হবে।
একই সঙ্গে ২৫ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে সার ও বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। প্রতিজন কৃষককে ১০ কেজি করে ডিএপি, ১০ কেজি করে এমওপি ও ৫ কেজি করে উফশী জাতের বীজ প্রদান করা হবে। এসব প্রণোদনা পাবেন মিরসরাইয়ে ৬৭৫ জন, ফটিকছড়িতে ৩১২৫ জন, হাটহাজারীতে ১৮০০ জন, রাউজানে ১৮০০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ২৮৭৫ জন, বোয়ালখালীতে ৭৫০ জন, পটিয়ায় ১৮০০ জন, কর্ণফুলীতে ৩৫০ জন, আনোয়ারায় ২২০০ জন, চন্দনাইশে ১৩৭৫ জন, লোহাগাড়ায় ১৫৫০ জন, সাতকানিয়ায় ২৭০০ জন, বাঁশখালীতে ৪ হাজার জন।
তাছাড়া রবিশস্য উৎপাদনকারীদের মধ্যে মিরসরাইয়ে ১২১৫ জন, সীতাকুণ্ডে ৬৩০ জন, ফটিকছড়িতে ৭৪৫ জন, হাটহাজারীতে ৫২৫ জন, রাউজানে ৫৮৫ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৫১০ জন, বোয়ালখালীতে ৪০৫ জন, পটিয়ায় ৩৩০ জন, কর্ণফুলীতে ২১০ জন, আনোয়ারায় ৩৬০ জন, চন্দনাইশে ২৮০ জন, লোহাগাড়ায় ৪৮০ জন, সাতকানিয়ায় ৪৬৫ জন, বাঁশখালীতে ৩৬৫ জন এবং সন্দ্বীপে ৫৪৫ জনকে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হবে।