আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিবেদক: চার বছরের অপেক্ষা কাটিয়ে গত ২০ নভেম্বর প্রথমবারের মতো মরুভূমিতে বিশ্বকাপ ফুটবল মাঠে গড়ায়। ত্রিশ দিনের গাদা গাদা রেকর্ড, ভাঙা-গড়ার নানামুখি চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্য, চমকপ্রদ বেশকিছু আপসেট, গতি-শিল্পের অপূর্ব সংমিশ্রণে গোটা বিশ্ব হয়ে উঠেছিল একটি ফুটবল পরিবার। নতুন করে চার বছরের জন্য অপেক্ষার বার্তা জানিয়ে ফুটবলের বিশ্ব মিলনমেলা ভাঙবে আজ। আগামী চার বছর কারা বিশ্ব রাজত্ব করবে তা চুড়ান্ত হবে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে আজ রাতে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ও কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্সের ফাইনালের মাধ্যমে।
সম্ভবত সবচেয়ে বড় আনন্দের ঢেউ খেলে যাবে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব পিএসজিতে। কারণ, আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি এবং ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে দুজনই পিএসজির খেলোয়াড়। তাই ফলাফল যাই হোক না কেন, উৎসবটা যে ফরাসী ক্লাব পিএসজিতেই রয়ে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মেসির দল জিতুক আর এমবাপ্পের দল জিতুক, তৃতীয়বারের মতো বিশ্ব শিরোপা দখল করবে তারা।
১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। এরপর দীর্ঘ ৩২ বছরে ৮টি বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট হয়েও তৃতীয় শিরোপা জেতা হয়নি তাদের। এবার ২২ নভেম্বর নিজেদের প্রথম ম্যাচে এশিয়ান শক্তি সৌদি আরবের কাছে ১-২ গোলে লজ্জার হারে বিশ্বকাপে যাত্রা করে মেসি বাহিনী। দ্বিতীয় ম্যাচে ২-০ গোলে মেক্সিকোকে এবং তৃতীয় ম্যাচে ২-০ গোলে পোল্যান্ডকে পরাজিত করে গ্রুপশীর্ষ হয়েই নকআউটপর্বে উঠে আসে আর্জেন্টিনা। শেষষোলতে ২-১ গোলে অবশ্য অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করার পর শেষআটে আলবিসেলেস্তদের সামনে পড়ে শক্তিশালী নেদারল্যান্ডস। নির্ধারিত সময়ে খেলা ২-২ গোলে ড্র থাকার পর ভাগ্য নির্ধারনী টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতে সেমির টিকিট পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এরপর সেমিতে গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে মেসিরা। ফ্রান্স গ্রুপপর্বে ৪-১ গোলে অস্ট্রেলিয়াকে ও ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারালেও তিউনেশিয়ার কাছে ০-১ গোলে হেরে গেলে অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে যায় তাদের। ফ্রান্স দল শেষষোলতে পোল্যান্ডকে ৩-১ গোলে, কোয়ার্টার ফাইনালে ২-১ গোলে ইংল্যান্ডকে এবং সেমিফাইনালে মরক্কোকে ২-০ গোলে পরাজিত করে শিরোপা লড়াইয়ের টিকিট লাভ করে।
বিশ্বকাপের প্রথম আসর থেকেই খেলছে আর্জেন্টিনা। প্রথম আসরের ফাইনালে স্বাগতিক উরুগুয়ের কাছে ২-৪ গোলে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল আলবিসেলেস্তরা। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায় আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালেরও মুখ দেখেনি। ৪৮ বছর পর ১৯৭৮ সালে ফাইনালে উঠে শিরোপাই জিতে নেয় তারা। ফাইনালে ৩-১ গোলে ডাচদের হারিয়ে দেয় আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৮৬ সালে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনার নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা শিরোপা লাভ করে তারা। এই শিরোপাই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল দল হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আসে। আর সেই জনপ্রিয়তাকে নতুন মোড়কে তুলে ধরেছেন মেসি। যাইহোক, ১৯৮৬ সালের পরের আসরেও ফাইনালে উঠে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ১৯৯০ সালের ফাইনালে জার্মানীর কাছে ০-১ গোলে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয় তারা। ২০১৪ সালের আসরে ফের ফাইনালে উঠে আর্জেন্টিনা। সকলের ধারনা ছিল ১৯৯০ সালের যন্ত্রনা মুছে ফেলতে পারবে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফাইনালে ০-১ গোলে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তষ্ট থাকতে হয় তাদের। ফ্রান্স ১৯৫৮ সালে তৃতীয় স্থান লাভ করে আলোচনায় আসে। এরপর ১৯৮২ সালে চতুর্থ স্থান লাভ করে। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় স্থান পায় তারা। ১৯৯৮ সালে প্রথম শিরোপা লাভ করে ফ্রান্স। ফাইনালে তারা ৩-০ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে দেয়। ২০০৬ সালে ফাইনালে পাইব্রেকারে ইতালির কাছে হেরে রানার্সআপ হয় তারা। ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা লাভ করে ফ্রান্স। ফাইনালে তারা ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দেয়। রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি-অর জয়ী মেসির হাতেই এবারের বিশ্বকাপের ট্রফি শোভা পাবে নাকি বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় এমবাপ্পে ট্রফি হাতে নেবেন সেটার সমাধান হবে আজ ফাইনালে। ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বত্রিশ বছর পর ফের তারা বিশ্বকাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে। ২০২৬ সালের আসরটি অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র একা নয়, সঙ্গে যৌথ আয়োজক থাকবে কানাডা ও মেক্সিকো। আজ ফাইনালের পর পরই ক্ষণগনণা শুরু হয়ে যাবে ২৩তম আসরের। তবে এখন দেখার পালা এবারের শিরোপা জেতে কোন্ দল মেসির আর্জেন্টিনা নাকি এমবাপ্পের ফ্রান্স। আবার এবারের ফাইনালিস্ট ফ্রান্স ও অর্জেন্টিনা এরআগে দুবার করে শিরোপা জেতায় যারাই জিতবে তারা পাবে তৃতীয় শিরোপা।