চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: তার সরকার বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আধুনিক প্রযুক্তির মিশেলে নানান প্রকল্প ও উন্নয়ন কাজের চিন্তা একমাত্র আওয়ামী লীগই করতে পারে।
শনিবার সকালে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ সম্পন্নের উদযাপন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নদীর তলদেশে প্রথমবারের মতো টানেল স্থাপনকে বাংলাদেশের জন্য বিস্ময় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আমাদের অঞ্চলে এমন টানেল একটি বিস্ময়। এর ফলে দেশের ভাবমূর্তি আরও উঁচু হবে। অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।
বক্তব্যে তিনি পদ্মা সেতুসহ দেশের নানান সড়ক ও যোগাযোগ প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামের উন্নয়নে আমরা ব্যাপক প্রকল্প নিয়েছি। চট্টগ্রাম অবহেলিত ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন কাজ শুরু করে।
চীনের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় এই টানেল নির্মাণ হওয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নৌবাহিনী, স্থানীয় জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বাংলাদেশকে বদলে দেওয়া। দরিদ্রের হার কমেছে। এদেশে আর দরিদ্র থাকবে না। আমরা দারিদ্র্য দূর করতে সক্ষম হয়েছি। খাবারের জন্য হাহাকার থাকবে না। আমরা নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করার সক্ষমতা রাখি। নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করব। কারও কাছে হাত পাতব না। মিতব্যয়ী হতে হবে। একদিকে করোনা, আরেকদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। মুদ্রাস্ফীতি বিশ্বব্যাপী। আমরা আমাদের অর্থনীতি গতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছি।
‘আমাদের কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। সবাইকে মাথায় রাখতে হবে, যার যেখানে জায়গা আছে, উৎপাদন করার মানসিকতা থাকবে হবে। তাহলে মন্দা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব’—যোগ করেন শেখ হাসিনা।
দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও এসব উন্নয়ন যাদের চোখে পড়ে না তাদের একহাত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন অনেকের চোখে পড়ে না। আমরা আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। তারা সেখানে চোখ দেখাতে পারে। চোখ থাকতেও অন্ধ। তারা কখনো মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবে না। এতিমের টাকা লুট করতে পারবে।
চীনের সাংহাই শহরের আদলে তৈরি হবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। হাজার কিলোমিটার দূরের সেই শহরের মতো চট্টগ্রামেও নগর থাকবে একটি। কিন্তু নদীর দু’তীরে থাকবে দুটি টাউন। এই মর্ম কথা বুকে নিয়ে টানেলের স্লোগান হলো- ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকছে। আর আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়াল সড়ক। নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩৬ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। নদীর মাঝ পয়েন্টে এই গভীরতা প্রায় ১৫০ ফুট। প্রতিটি ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার।
মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে মোট চারটি লেন থাকবে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকবে। যার ৯৯ শতাংশের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা ঋণ দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক।