বেনাপোল থেকে সাড়ে ১৫ কোটি টাকার সাড়ে ১৬ কেজি সোনার বারসহ আটক ২

আব্দার রহমান,যশোর: বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ১১২ পিচ সোনার বারসহ দুইজনকে আটক করেছে যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) জওয়ানরা। আটক সোনার পরিমাণ ১৬ কেজি ৫১২ গ্রাম। যার বাজার মূল্য সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০ টার সময় বেনাপোল আমড়াখালি বিজিবি চেকপোস্ট থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃত আসামিরা হলেন, কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার মনু মিয়ার ছেলে ওমর ফারুক (২৭) ও চাঁদপুর জেলার মতলেব উওর থানার কালিপুর বাজার এলাকায় বারেক সরকারের ছেলে ফরহাদ সরকার (৩২)।

যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী জানান, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি যশোর বেনাপোল হাইওয়ে দিয়ে পিকআপ ভ্যানে করে বিপুল পরিমাণ সোনার একটি চালান বেনাপোল সীমান্তের দিকে যাবে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে যশোর বেনাপোল হাইওয়ের আমড়াখালি চেকপোস্টে সন্দেহ ভাজন একটি পিকআপ ভ্যানের গতিরোধ করা হয়। এসময় সে পিকআপ ভ্যানটি (যার নম্বর-ঢাকা মেট্রো-ন-১৯৮৩৯০) তল্লাশি চালিয়ে ১৬ কেজি ৫১২ গ্রাম ওজনের ১১২ পিচ সোনার বার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আটককৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সোনার চাহিদা বেশি থাকায় গডফাদাররা সীমান্ত দিয়ে সোনা পাচারের জন্য মরিয়া হয়ে যায়। কিন্তু সীমান্তে বিজিবি তৎপর হওয়ায় একের পর এক সোনার চালান আটক করা সম্ভব হচ্ছে। গডফাদার সহ স্বর্ণ পাচারকারীদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় এনে সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণের চালান শূন্য্যের কোটায় নামিয়ে অনার দাবি জান। আটককৃত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে বেনাপোল পোর্ট থানায় মামলা দায়ের এবং সোনার বার ট্রেজারীতে জমা করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
সীমান্তের সূত্রগুলো জানায়, যশোরের শার্শা-বেনাপোল-চৌগাছার বিভিন্ন সীমান্তে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ভারতে সোনা পাচার সিন্ডিকেটের হোতারা। পিছিয়ে নেই বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনও। বিভিন্ন সীমান্তের অবৈধ ঘাটের পাশাপাশি স্থল বন্দর দিয়ে বিভিন্নভাবে ভারতে পাচার করা হচ্ছে সোনার চালান। যশোরের শার্শা-বেনাপোল-চৌগাছা এবং ঝিকরগাছার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সোনার বার। যার মধ্যে শার্শা সীমান্তের গোগা, ভূলাট, অগ্রভূলাট, পাঁচভূলাট, রুদ্রপুর, হরিশচন্দ্রপুর, কায়বা, চরপাড়া ও দাঁদখালীসহ অন্তত ১০টি এবং বেনাপোলের পুটখালী, দৌলতপুর, বড়আচড়া, রেললাইন, মেইন বর্ডার, সাদীপুর, বাহাদুরপুর এবং বাদশার রঘুনাথপুরসহ অন্তত: ২০টি অবৈধ ঘাট দিয়ে পাচার করা হচ্ছে ছোট-বড় সোনার চালান। অবৈধ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সোনা পাচার হচ্ছে। এই ঘাটগুলো দিয়ে যত সোনা পাচার হয়ে ভারতে যায় তার সবই জমা পড়ে বস্ গৌতমের সিন্ডিকেটে। তারপর অপু সাহাসহ বিভিন্ন জনের হাত বদল হয়ে পৌছায় গন্তব্যে। তবে এখন সবচেয়ে বেশি সোনা পাচার হয় শার্শার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে। চৌগাছা উপজেলার তিলেকপুর, লক্ষীইন্দেরপুর, হিজলী, আশ্বীনেপুকরে, গয়ড়া, নাইড়া, দিঘড়ী, দিঘলসিংহা, ঢেঁকিপোঁতা, মনমথপুর, কাবিলপুর, মাশিলা, টেঙ্গুরপুর, আন্দুলিয়া, শাহাজাদপুর, বল্লভপুর, পুড়াপাড়া, রামকৃষ্ণপুর, ফাঁসতলা, বড়খানপুর, বুন্দলীতলা, দৌলতপুর, সলুয়া, নিমতলা, চান্দা আফরার মোড়, কয়ারপাড়া, লস্কারপুর, পুড়াপাড়া, মশিউরনগর মোড় এলাকায় মাদকের বিস্তার বেশি।
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন ধরে যশোররের বিভিন্ন সীমান্তের অবৈধ পকেট ঘাটের পাশাপাশি বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়েও পাচার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ সোনার বার। কখনও পাসপোর্টযাত্রী, কখনও পণ্যের গাড়ি আবার কখনও কখনও পণ্য খালাস করে ফেরত যাওয়া ভারতীয় ট্রাকে করেও বিপুল সোনা পাচার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওপারে ভারতের পেট্রাপোলে অনেকবার সোনার চালান আটক হয়েছে। তবে সে হিসেবে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানটা অদৃশ্য কারণে খুবই নগণ্য। দক্ষিণ-পশ্চিমা লের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সোনা পাচার হচ্ছে যশোরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে। বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পাচার হওয়া সোনা যায় সোহেল, হায়দার, বাবু এবং কামালের মাধ্যমে চলে যায় আন্তর্জাতিক সোনা পাচারকারী মাফিয়া ডন বস্ গৌতম, আজগার, নাসির, অপুসাহা এবং ডাকুর ডেরায়। ওপারে যার কাছেই এসব সোনা ভারতের ওপারে আন্তর্জাতিক সোনা পাচারকারী বস্ গৌতমের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলে যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। প্রতিদিন এভাবে অন্তত মন-মন সোনা গৌতমের মাধ্যমে পাচার করা হয়। ওপারে বস্ গৌতম আর এ দেশে সোনা সরবরাহকারীদের মধ্যে আর্ন্তজাতিক সোনাপাচারকারী ঢাকার আওলাদ, ইমরান, আরিফ, খোকা, রাম এবং চট্রগ্রামের ভোলাসহ কয়েকজন কুখ্যাত সোনা পাচারকারীরা। সবঘাট ম্যানেজ করেই এই চক্রের পাচার চলছে অবিরাম গতিতে। এ বিষয়ে বিজিবির অভিযান ছাড়া তেমনটি আর চোখে পড়ে না বলে জানান সীমান্তের সূত্রগুলো। ঢাকার আওলাদের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে।