ক্ষমতায় আসাতে বিদেশি প্রভুদের কাছে ধরনা দিচ্ছে বিএনপি হানিফ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
বিএনপির আন্দোলনে দেশের মানুষ সাড়া দেয়নি, তাই এখন তারা বিদেশি প্রভুর কাছে ধর্না দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দূতাবাসে দূতাবাসে ধরনা দিচ্ছেন। এই দেশে আইন আদালত আছে। বিদেশি প্রভুদের কাছে ধর্না দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় আসতে হবে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদের স্মরণে শুক্রবার কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশে বিএনপির রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার আছে কিনা- এমন প্রশ্ন রেখে হানিফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশে পাকিস্তানি আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করেছে। ৭ মার্চের ভাষণ, জয় বাংলা নিষিদ্ধ করা করেছে। পাকিস্তান জিন্দাবাদের আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ নিয়ে এসেছিল।’

মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। দালাল আইন বাতিল করে রাজাকার, আলবদর মুক্ত করে দিয়েছিলেন। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যায় সরাসরি ভূমিকা রাখা জামায়াতে ইসলামিকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। জিয়া মুক্তিযোদ্ধা হলে তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিতেন না। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না বলেই এসব কাজ করেছেন।’ জিয়াউর রহমান সব কাজ পাকিস্তানের নির্দেশে করেছেন বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

হানিফ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি ধারা সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আরেকটি হলো বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী প্লাটফর্ম। এই ধারা পাকিস্তানের নির্দেশে চলে। তারা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে। তারাই দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। আর এখন নির্লজ্জ বেহায়ার মতো কথা বলছে।’

বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশের মানুষকে কি দিয়েছিল- এমন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তারা খুন, হত্যা, জঙ্গিবাদ দিয়েছিল। বিএনপি দেশকে জঙ্গিবাদের রাষ্ট্র বানিয়েছিল। সন্ত্রাসী তারেক রহমান দেশে ১২৫টি জঙ্গি গোষ্ঠী তৈরি করেছিল। উগ্র, মৌলবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেই তালেবানি জঙ্গিরাষ্ট্র থেকে উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে গেছেন।’

তারেক রহমানের লন্ডনে বসে আয়েশি জীবনযাপন করার উৎস জানতে চেয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতে হাওয়া ভবন বানিয়ে দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে, বিদেশে পাচার করেছে। লুটপাটের সেই সম্পদ দিয়ে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছে। আর আজ তারা (বিএনপি) সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার আগে তাদের লজ্জা হওয়া উচিত।’

আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘পূর্বপকিস্তানকে সকল ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তান বঞ্চিত করছিল। বাজেটের ৮০ ভাগ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য আর পূর্বপাকিস্তানের জন্য ছিল মাত্র ২০ ভাগ। বঙ্গবন্ধু শুরু থেকেই এর প্রতিবাদ করেছেন। তখনই তিনি বাঙালির মুক্তির জন্য স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন। সেই স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে পুরো দেশ চষে বেড়িয়েছেন।’

মাহবুব-উল আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান শাসনামলের ২৩ বছরের মধ্যে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় প্রায় ১৪ বছর কারাগারে ছিলেন। তবুও বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি কখনো পিছপা হননি। তার লক্ষ্য ছিল স্থির। তার নেতৃত্বে যুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি।’

হানিফ বলেন, ‘১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু ৯ মাসের মধ্যে সংবিধান দিয়েছিলেন। সাড়ে তিন বছরে দেশ পুনর্গঠন করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। যাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম সেই পাকিস্তান ও তাদের মিত্র রাষ্ট্র একাত্তরের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। তাই প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। আর এর মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নকে হত্যা করা হয়েছে। ৩০ লাখ শহিদের আত্মাকে পদদলিত করা হয়েছিল।’

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘১৯৪৮ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর জিন্নাহসহ পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা বলেছেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। তাদের কাছে আমাদের ভাষার কোনো মূল্য নেই। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিবাদ করেছিলেন। সেই সময়ে বেশিরভাগ ছিল কৃষক পরিবার। অল্প শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত। মানুষ অধিকার সম্পর্কে সচেতন ছিল না। তাদেরকে রাজপথে নামানো কঠিন ছিল। তিনি জানতেন ছাত্রসমাজ জাগ্রত, সচেতন সমাজ হিসেবে স্বীকৃত। তাই মানুষের অধিকার জাগিয়ে তোলার জন্য তিনি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।’

সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে হানিফ বলেন, ‘ছাত্রলীগ অত্যন্ত সুশৃঙ্খল সংগঠন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। আর এজন্য ছাত্রলীগকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।’

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী, আ. ক. ম. সরোয়ার জাহান বাদশা এমপি, ব্যারিস্টার সেলিম এমপি। সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আতিকুর রহমান ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ।