যশোর প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছা থেকে অপহরণের পাঁচদিন পর সোনা পাচারের শ্রমিক শাহিনকে (৩৩) উদ্ধার করেছে যশোর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। উদ্ধার শাহিন চৌগাছার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের শাহাজাদপুর গ্রামের আলমের ছেলে।একইসাথে অপহরণ ও সোনা পাচারে জড়িত ঘটনায় চৌগাছার কাবিলপুর গ্রামের বাসিন্দা মোজাফফর হাসান, আবু সাঈদ এবং শার্শা উপজেলার শ্যামলগাছি গ্রামের রবিউল হোসেন ও লিটনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি।
বুধবার (৮ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিছেয়েছেন যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও যশোর ডিবির ওসি রুপন কুমার সরকার
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ৩ জুন সকাল সাড়ে নয়টায় চৌগাছার বড়কাবিলপুর বাজারের আবু সাঈদের সার-কীটনাশকের দোকানের সামনে থেকে চৌগাছার শাহাজাদপুর গ্রামের শাহীন (৩২) ও তার শ্যালক বাঘারপাড়া উপজেলার বেতালপাড়া গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে ইয়ামিনকে (১৯) আবু সাঈদ, মন্টু, লিটন নামের চোরাকারবারীরা অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে আটকে রাখে। পরদিন ৪ জুন দুপুর সাড়ে বারোটায় ইয়ামিন কৌশলে অপহরণকারী চক্রের হেফাজত থেকে পালিয়ে আসলেও শাহিনকে তারা আটকে রাখে।
শাহিনের পরিবার জানতে পারে যে, আবু সাঈদ চৌগাছার শাহাজাদপুর সীমান্ত দিয়ে কীটনাশকের প্যাকেটের কথা বলে প্যাকেট ভর্তি কেজি কেজি সোনা শাহীন ও ইয়ামিনের মাধ্যমে ১০০০ টাকা মজুরি মূল্যে ভারতে পাচার করতো। একইভাবে ৩ জুন সকাল ৮টায় আবু সাঈদ ২টি প্যাকেটে ৩ কেজি সোনা শাহীনকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের জন্য দেয়। শাহীন তার শ্যালক ইয়ামিন ও তার ভাই আবু হুরাইরা (১৪) মাধ্যমে প্যাকেট ২টি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের জন্য শাহাজাদপুর মাঠ দিয়ে মাঠে উঠে। এ সময় অ্যাপাচি লাল রংয়ের একটি মোটরসাইকেলযোগে এসে অজ্ঞাত ২ ব্যক্তি ইয়ামিনকে ভারতে অমল-রাজুর লোক পরিচয় দিয়ে কৌশলে দেড় কেজি সোনা ভর্তি ১টি প্যাকেট নিয়ে চলে যায়। আরেকটি প্যাকেট আবু হুরাইরা ভয়ে মাঠে ফেলে দেয়।
তখনই বিষয়টি শাহীন আবু-সাঈদকে জানালে আবু-সাঈদ শার্শার চোরাকারবারী মন্টু ও লিটনকে জানালে মন্টু ও লিটন ৪/৫ লোক নিয়ে কাবিলপুর বাজারে আসে এবং শাহীন ও ইয়ামিনকে ডেকে তাদেরকে অপহরণ করে বেনাপোলের অজ্ঞাত একটি বাড়িতে আটকে রেখে টর্চার করতে থাকে। সেখানে থেকে ইয়ামিন কৌশলে পরদিন পালিয়ে আসলেও শাহীনকে তারা ৫ দিন যাবৎ আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে।
শাহিনের পিতা আলম ৭ জুন চৌগাছা চৌগাছা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সেটি ৩৬৫/৩৪ পেনাল কোড মামলা হিসেবে নথিভূক্ত হয়। ঘটনাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, তদন্তের জন্য যশোর ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দেন।
নির্দেশ মোতাবে ডিবির ওসি রুপন কুমার সরকারের নেতৃত্বে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম তথ্য-প্রযুক্তির সহযোগিতায় অপরাধীদের অবস্থান শনাক্ত করেন। এরপর ডিবির একটি চৌকশ দল নিয়ে ৭ জুন বিকাল ৫টা থেকে ৮জুন সকাল ৭টা পর্যন্ত চৌগাছা থানার কাবিলপুর, শার্শা, বেনাপোল পোর্ট ও ঝিকরগাছা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী ও চোরাকারবারী চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের স্বীকারোক্তিতে বেনাপোল পোর্ট থানাধীন পৌর গেটের পশ্চিম পার্শ্বে হক ফিলিং ষ্টেশনের সামনে থেকে অপহৃত শাহীনকে (৩২) উদ্ধার করেন। এসময় আসামিদের কাছ থেকে অপহরণকাজে ব্যবহৃত ১টি ডিসকভার মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন জব্দ করে ডিবির দল।
প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে ডিবির ওসি আরো জানান, গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে আবু সাঈদ এবং অপহরণের স্বীকার শাহিন ও ইয়ামিন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতারকৃত অন্য আসামি লিটনকে ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
ডিবির ওসি রুপন কুমার আরো জানান, গ্রেফতারকৃত ও ভিকটিমদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শার্শার মন্টু, লিটন ও তাদের অন্যান্য সহযোগীরা চোরাকারবারীর সাথে জড়িত। তারা চৌগাছার কাবিলপুর বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ী আবু সাঈদের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রমিক দিয়ে শাহাজাদপুর সীমান্ত দিয়ে কীটনাশকের প্যাকেটের কথা বলে প্যাকেট ভর্তি কেজি-কেজি সোনা ১০০০ টাকা মজুরী মূল্যে ভারতে পাচার করতো।
গত ৩ জুন সকাল ৮টায় আবু সাঈদ ২টি প্যাকেটে ৩ কেজি সোনা শাহিনকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের জন্য দেয়। শাহিন তার শ্যালক ইয়ামিন ও ভাই আবু হুরাইরার (১৪) মাধ্যমে প্যাকেট ২টি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠানোর জন্য শাহাজাদপুর মাঠ দিয়ে মাঠে উঠলে চোরাকারবারী মন্টু, লিটনের লোক ছিনতাইকারী সেজে দেড়কেজি ওজনের ১টি প্যাকেট ছিনতাই করে চোরাই সোনা আত্মসাৎ করে এবং নিজেদের অপরাধ-লুকিয়ে পাচারকারী ওপর মহলে ভাল থাকার জন্য শ্রমিক শাহীন ও ইয়ামিনকে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়। অবশেষে ৫ দিন পর ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় ভিকটিম শাহীন উদ্ধার হয়।